প্রশ্নঃ নামাজের মধ্যে মুক্তাদী ব্যক্তির ইমামের আগে নামাজের কোন রুকন আদায় করার ব্যাখ্যা কি?
উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم
নামাজে ইমাম সাহেবের আগে মুক্তাদি ব্যক্তির রুকু-সিজদাসহ যেকোনো রুকনে (নামাজের পুরো একটি স্তম্ভ) চলে যাওয়া অবৈধ। এ অবস্থায় ইমাম সাহেব যদি মুক্তাদী ব্যক্তিকে ওই রুকনে পায়, তাহলে নামাজ আদায় হয়ে গেলেও ওই মুক্তাদি ব্যক্তি গুনাহগার হবে। আর ইমাম সাহেব যদি তাকে ওই রুকনে না পায়, তাহলে ওই মুক্তাদি ব্যক্তির নামাজ ভেঙে যাবে।
প্রশ্নঃ মুআজ্জিন সাহেব ইকামতের সময় হাঁটাচলা করেন, এক কাতার থেকে অন্য কাতারে যান, মুআজ্জিন সাহেবের ইকামতের উক্ত পদ্ধতি সঠিক কিনা, তাকে পুনরায় ইকামত দিতে হবে কিনা?
উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم
মুআজ্জিন সাহেব উক্ত কাজ ঠিক করেননি, ইকামতের সময় এমন কাজ করা অনুত্তম, তবে এক্ষেত্রে পুনরায় ইকামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই ইকামত আদায় হয়ে গেছে।
সুত্রঃ আল মুহিতুল বুরহানিঃ ১/৩৪৫, ফাওয়াওয়ায়ে কাজিখানঃ ১/৩৮, আল বাহরুর রায়েকঃ ১/২৫৭, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাতঃ ৩/২১৪
১. আমাদের এক মুসল্লী ভাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন, কিন্তু নামাজের সময় হাঁটু ভাজ করতে পারেন না, আসলেই সে হাটু ভাজ করতে অপারগ, এক্ষেত্রে সে কিভাবে নামাজ আদায় করবে?
২. হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যথা হওয়ার কারণে সিজদায় যাওয়া এবং সিজদা থেকে ওঠা খুবই কষ্টকর, এক্ষেত্রে আমি চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে পারব?
৩. কিছু সমস্যার কারনে আমি জমিনে বসতে অপারগ, তাহলে আমি নামাজ কিভাবে আদায় করব?
৪. সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে পারবেন?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
১. সত্যিই যদি উক্ত মুসল্লী হাটু ভাজ করতে অপারগ হয়, তাহলে বসতে পারলে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করবে, অন্যথায় চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করার অনুমতি আছে।
২. জমিনে বসে ইশারায় নামাজ পড়বেন, তবুও যদি সমস্যা হয় তাহলে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে, তবে জমিতে বসে পড়াই উত্তম।
৩. সত্যই যদি আপনি শরীয়ত সম্মত সমস্যার কারণে জমিনে বসতে অপারগ হন, তাহলে চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করবেন, তবে রুকুতে যতটুকু মাথা ঝুকাবেন সিজদার সময় ইশারার মধ্যে রুকুর চাইতে বেশি মাথা ঝুকাতে হবে।
৪. জমিনে বসে নামাজ পড়াই উত্তম হবে, তবে অনুত্তম হলেও চেয়ারে বসতে পারবে, চেয়ারে বসে নামাজ পড়লে ইশারায় রুকু সিজদা করবে, সেজদা করতে অক্ষম ব্যক্তির কিয়াম রহিত হয়ে যায়, তাই চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়া অবস্থায় দাঁড়াতেও পারবে।
খতম তারাবীহের জন্য নির্ধারণ করা হাফেজ সাহেবকে এর বিনিময় দেওয়া নাজায়েজ ও হারাম একথা আমাদের জানা আছে, কিন্তু যদি তার জন্য উত্তম খানা, যেমন তারাবির নামাজের পরে দুধ-শরবত ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়, এবং যাতায়াতের জন্য খরচ বাবদ কিছু টাকা দেয়া হয়, হাফেজ সাহেবের খরচের পরে কিছু টাকা বেঁচেও যায়, তাহলে খরচের টাকা হাফেজ সাহেবের গ্রহণ করা বৈধ কিনা? বেঁচে যাওয়া টাকার হুকুম কি?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
মেহমান হিসেবে যাতায়াত খরচ ও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা জায়েজ আছে, তবে খরচের পর যদি টাকা বেঁচে যায় সে টাকা ফেরত দেওয়াই উত্তম।
মুহতারাম, হযরত মুফতি সাহেব হুজুর, আমার প্রশ্ন হলো যে,
১. আমরা লক্ষ করছি মিজানুর রহমান আজহারী যেই ফতওয়া দিচ্ছেন যে, তারাবিহের সালাতে কুরআন হাতে নিয়ে দেখে পড়া জায়েজ আছে। তাই আমি আপনার কাছে জানতে চাই তার ফতওয়া কতোটুকু ইসলামি শরিয়াত সাপোর্ট করে?
২. তিনি গতকাল ০১/০৫/২০২০ইং তে আবারও লাইভে এসে একটি নতুন ফতওয়া দিলেন যে, রিকশা ওয়ালারা রমজানের সিয়াম এই গরম কালে না রাখে তারা শীতের দিনে রাখবে, চাইলে তারা গরমের দিনে সিয়াম ছেড়ে দিতে পারবে, জায়েজ আছে। তাই হুজুরের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে দুটি ফতওয়া তা শরিয়তের ভাষায় কতটুকো ঠিক তা জানালে উপকৃত হবো।
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
১. মিজানুর রহমান আজহারী মুফতি নন, তার এই ফতওয়া শুধুই গোমরাহী। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতসহ সকল নামাযে পবিত্র কুরআনে কারিম দেখে পড়া জায়েয নয়, দেখে পড়লে নামাজ হবে না, আর নামাজে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টালে আমালে কাছিরা হওয়ার কারনে নামাজ হবে না।
২. যারা রিক্সাওয়ালা বা মজদুরীর কঠিন কাজ করে, তাদের উচিত হবে পবিত্র মাহে রমাযানে তারা বিরতি দিয়ে দিয়ে কাজ করবে, কাজের ফাকে একটু আরাম করে নিবে, কারো অধিনস্ত হলে মালিক কর্মচারিকে আরামের সুযোগ দিবে, যদি মালিক এ সুযোগ না দেয় তবুও রোজা রাখতে হবে, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর গরমের অযুহাতে রোজা ভেঙ্গে শীতকালে রোজা রাখার কথা বলা শরীয়তের ফরজ বিধানের সাথে তামাশার নমান্তর ও গোমরাহী।
তবে পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, পিপাসার কারনে মৃত্য হয়ে যাবে, তাহলে রোজা ভাঙ্গা যাবে, এবং পরে কাজা করে নিতে হবে।
সুত্রসমূহ
الدر المختار: 2/383-384 لا يجوز أن يعمل عملاً يصل به إلى الضعف، فيخبز نصف النهار ويستريح الباقي، فإن قال: لا يكفيني، كذب بأقصر أيام الشتاء، فإن أجهد الحر نفسه بالعمل حتى مرض فأفطر ففي كفارته قولان، قنية
فتاوی شامی: 2/420 ”(قوله: لا يجوز إلخ) عزاه في البحر إلى القنية. وقال في التا تارخانية: وفي الفتاوى سئل علي بن أحمد عن المحترف إذا كان يعلم أنه لو اشتغل بحرفته يلحقه مرض يبيح الفطر، وهو محتاج للنفقة هل يباح له الأكل قبل أن يمرض؟ فمنع من ذلك أشد المنع، وهكذا حكاه عن أستاذه الوبري، وفيها: سألت أبا حامد عن خباز يضعف في آخر النهار هل له أن يعمل هذا العمل؟ قال: لا ولكن يخبز نصف النهار ويستريح في الباقي، فإن قال: لا يكفيه، كذب بأيام الشتاء؛ فإنها أقصر فما يفعله اليوم اهـ ملخصاً.
(قوله: فإن أجهد الحر إلخ) قال في الوهبانية: فإن أجهد الإنسان بالشغل نفسه فأفطر في التكفير قولين سطروا، قال الشرنبلالي: صورته: صائم أتعب نفسه في عمل حتى أجهده العطش فأفطر لزمته الكفارة، وقيل: لا، وبه أفتى البقالي”۔ (২/ ৪২০، کتاب الصوم، ط: سعید)
আসসালামুআলাইকুম, হুজুর আমার প্রশ্ন হলো, যে ঘরে পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে, সে ঘরে নামাজ পরলে নামাজ হবে কি?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ “ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। হযরত ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী মাইমূনাহ রা. আমার নিকট বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জিবরাঈল আলাহিস সালাম আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলেন কিন্তু সাক্ষাত করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন। এরপর জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন: “যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না।” সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন। এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া। তিনি আরও বলেছেন: أَنْ لاَ تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ “কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বে না, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না।” সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে: وَلاَ صُورَةً إِلاَّ طَمَسْتَهَا ”আর কোনো ছবি পেলে তা মুছে দিবে।” এ মর্মে বহু হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মুহাদ্দিসগণ বলেন: উল্লেখিত হাদিসগুলোতে যে সকল ফেরেশতা প্রবেশ করবে না বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রহমত ও বরকতের ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ কোনো ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি ও কুকুর থাকলে ঐ সকল প্রবেশরতাগণ তাতে প্রবেশ করে না যারা রহমত ও বরকত নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আগমন করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাদের দায়িত্ব পালনার্থে অবশ্যই প্রবেশ করে- ঘরে যতই ছবি, মূর্তি ও কুকুর থাকুক না কেন। যেমন: প্রাণ সংহারের দায়িত্বে নিয়োজিত মালাকুল মওত বা মৃত্যু দূত, তাঁর সঙ্গে আগত ফেরেশত মন্ডলী, মানুষের কার্যবিবরণী লেখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কিরামান কাতিবীন বা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ ইত্যাদি।
মোটকথা, এ সকল ছবিকে ঘর থেকে সরানো জরুরি অথবা আসবাব-পত্রে যে সকল প্রাণীর ছবি বা প্রাণীর কার্টুনের ছবি আছে কমপক্ষে সেগুলোর মুখমন্ড কালি দিয়ে বা যে কোনভাবে মুছে দেয়া জরুরি। মুখ মন্ডল তথা চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি মুখাবয়বের চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকলে তার উপর ছবির বিধান প্রযোজ্য হবে না। সম্ভব হলে ছবি-কার্টুন ও প্রতিকৃতি মুক্ত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। কিন্তু এ সব প্রাণীর ছবি, কার্টুন ইত্যাদি থাকা স্বত্বেও যদি সালাতের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে সালাত আদায় করা হয় তাহলে তা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যথাসম্ভব এমনটি করা উচিৎ নয়।