যে ঘরে পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে, সে ঘরে নামাজ পরলে নামাজ হবে কি?
ফতওয়া কোডঃ 10-সা,হাহা-09-08-1442
প্রশ্নঃ
আসসালামুআলাইকুম, হুজুর আমার প্রশ্ন হলো, যে ঘরে পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে, সে ঘরে নামাজ পরলে নামাজ হবে কি?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ “ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। হযরত ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী মাইমূনাহ রা. আমার নিকট বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জিবরাঈল আলাহিস সালাম আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলেন কিন্তু সাক্ষাত করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন। এরপর জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন: “যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না।” সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন। এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া। তিনি আরও বলেছেন: أَنْ لاَ تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ “কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বে না, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না।” সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে: وَلاَ صُورَةً إِلاَّ طَمَسْتَهَا ”আর কোনো ছবি পেলে তা মুছে দিবে।” এ মর্মে বহু হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মুহাদ্দিসগণ বলেন: উল্লেখিত হাদিসগুলোতে যে সকল ফেরেশতা প্রবেশ করবে না বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রহমত ও বরকতের ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ কোনো ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি ও কুকুর থাকলে ঐ সকল প্রবেশরতাগণ তাতে প্রবেশ করে না যারা রহমত ও বরকত নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আগমন করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাদের দায়িত্ব পালনার্থে অবশ্যই প্রবেশ করে- ঘরে যতই ছবি, মূর্তি ও কুকুর থাকুক না কেন। যেমন: প্রাণ সংহারের দায়িত্বে নিয়োজিত মালাকুল মওত বা মৃত্যু দূত, তাঁর সঙ্গে আগত ফেরেশত মন্ডলী, মানুষের কার্যবিবরণী লেখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কিরামান কাতিবীন বা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ ইত্যাদি।
মোটকথা, এ সকল ছবিকে ঘর থেকে সরানো জরুরি অথবা আসবাব-পত্রে যে সকল প্রাণীর ছবি বা প্রাণীর কার্টুনের ছবি আছে কমপক্ষে সেগুলোর মুখমন্ড কালি দিয়ে বা যে কোনভাবে মুছে দেয়া জরুরি। মুখ মন্ডল তথা চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি মুখাবয়বের চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকলে তার উপর ছবির বিধান প্রযোজ্য হবে না। সম্ভব হলে ছবি-কার্টুন ও প্রতিকৃতি মুক্ত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। কিন্তু এ সব প্রাণীর ছবি, কার্টুন ইত্যাদি থাকা স্বত্বেও যদি সালাতের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে সালাত আদায় করা হয় তাহলে তা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যথাসম্ভব এমনটি করা উচিৎ নয়।
সুত্রসমূহ
سنن النسائي: 5347
سنن ابی داؤد: 4157
صحیح المسلم: 969
سنن الترمذی: 1049
والله اعلم بالصواب
দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।
আপনিসহ এই ফতওয়াটি পড়েছেন মোট 713 জন।