কসম ও মান্নত (নযর)

বিয়ের পূর্বে শর্তের সাথে হতে যাওয়া স্বামীকে মেয়ের উপর হারাম করার কসমের হুকুম কি?

ফতওয়া কোডঃ 133-কমা-11-06-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। বিয়ের পূর্বে শর্তের সাথে হবু বরকে মেয়ে নিজের উপর হারাম করার কসমের হুকুম কি ? যদি শর্ত পাওয়া যায় কি হুকুম হবে না পাওয়া গেলে কি হুকুম হবে? বিয়ের পূর্বে মেয়ের হারাম শব্দ ব্যবহারে হবু বর চিরতরে হারাম হবে কি না ?

আমি বিয়ে সংক্রান্ত হারাম শব্দ দিয়ে কসমের মাসআলা নিয়ে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছি। ফলে আমাদের বিয়ে আটকে আছে এই মাসআলা সুষ্ঠু সমাধানের অপেক্ষায়, তাই অতি দ্রুত এ ব্যাপারে আপনাদের কাছে সমাধান প্রার্থী।

* আমি আমার হবু বরের সাথে হারাম শব্দ উল্লেখ করে একটা কঠোর বিষয়ে কসম করেছিলাম।
* আমার বাহ্যিক মৌখিক কসম ছিলোঃ” আমি কখনো আপনার পার্সোনাল কোনো কিছু নিজের কাছে রাখবোনা, এবং উনার নির্দিষ্ট একটা রবি নাম্বার উল্লেখ করে বলেছিলাম কখনো আমার কাছে আপনার এ নাম্বার ব্যাতীত অন্য নাম্বার থাকবেনা এবং আমার জানা মতে আমার পরিচিত যাদের কাছে এ রবি নাম্বার ব্যাতীত অন্য নাম্বার আছে সেখান থেকে ডিলিট করিয়ে দিবো। এবং যদি কখনো ভুলেও আমার সামনে আপনার পার্সোনাল কিছু এসে যায় তাহলে তা জানা মাত্রই সরিয়ে ফেলবো। যদি নিজের কাছে ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনার পার্সোনাল কিছু রাখি আপনার অজান্তে অনুমতি ছাড়া রাখি তাহলে আপনি আমার উপর হারাম বর্তমানে হোক বা ভবিষ্যতে হোক” অর্থাৎ বিয়ের আগে হোক বা পরে কসম ভাঙ্গলে হারাম হয়ে যাবেন।

* কিন্তু এ কসম দ্বারা আমার এবং আমাকে যিনি কসম করিয়েছেন উনার অভ্যন্তরীণ নিয়ত ছিলোঃ পার্সোনাল জিনিস বলতে উনার রবি নাম্বার ব্যাতীত অন্য কোনো নাম্বার, উনার ছবি/ভিডিও ইত্যাদি। তবে উনি নিজে থেকে যেটা দিবেন বা দেখাবেন সেটা আমার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত ছিলোনা। নিজে থেকে যদি সব কিছু দিয়ে দেয় তাহলে সেটা আমার নিয়তের বাইরে ছিলো। তবে আমি নিজে থেকে সে বিষয়গুলো উনার অগোচরে নিজের কাছে রাখবোনা।যাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তবে উনার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু রাখা ভিন্ন কথা।

এখন এ কসম থেকে আমার কয়েকটি বিধান জানার প্রয়োজনঃ-

১. ছবি/ভিডিওর বিষয় টাঃ কসম করার সাথে সাথে আমি উনার সমস্ত ছবি সব ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমার কাছে বর্তমানেও উনার ছবি/ভিডিও নেই। সুতরাং আমার জানার বিষয় হলো —”উনি নিজে কোনো ছবি দিলে সেটা আমি রাখতে পারবো কি না?”। উনার জ্ঞাতসারে রাখা বা না রাখার কি হুকুম হবে?”

—”অথবা উনার পরিবারের কারো ছবি আমার কাছে থাকলে সেটার কি হুকুম হবে! উনার জ্ঞাতসারে রাখলে কি হুকুম হবে আর অজ্ঞাতসারে রাখলে কি হুকুম হবে?”

—”আর উনার ছবি নাম্বার বা অন্য কোনো কিছু ইত্যাদি আমার জানা মতে আমার পরিচিত কারো কাছে থাকলে কি সেটা আমার এ কসমের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না! কারণ আমি ছবি/ভিডিওর ব্যাপারে এমনটা উল্লেখ করিনি বা নিয়তও করিনি। নিয়ত কেবল নিজের ক্ষেত্রেই ছিলো”।

২. নাম্বারের বিষয়টাঃ বলেছিলাম রবি ছাড়া আর কোনো নাম্বার থাকবে না। আমার জানার বিষয় হলোঃ
— যদি কখনো উনি নিজেই আমাকে সে নাম্বার ব্যাতীত অন্য নাম্বার দিয়ে কল দেয় তাহলে সেটা রিসিভ করলে আমার কসম ভাঙ্গবে কি না? এ ব্যাপারে কি হুকুম?

— অথবা যদি না বুঝে কথা বলেও ফেলি তাহলে বোঝার সাথে সাথে সেটা ডিলিট করে দিতে হবে কি না! যদি ডিলিট করি তাহলে কি হুকুম আর ডিলিট না করে রেখে দিলে কি হুকুম?

৩. আমি বলেছিলাম আমি যদি আমার কসমের খেলাফ কাজ করি তাহলে আপনি আমার উপর হারাম বিয়ের আগে হোক বা পরে।এটাতে আমার জানার বিষয় হলোঃ

৪. কোনো মেয়ের বিয়ের পূর্বে তার হবু বরকে শর্তের সাথে হারাম শব্দ উল্লেখ করে নিজের উপর হারাম করার কসম করলে, সেই শর্তাবলী পাওয়া গেলে কি হুকুম আসবে আর না পাওয়া গেলে কি হুকুম আসবে ?

৫. কসমের পূর্বে উনার ফ্যামিলির নাম্বার বা অন্য কোনো কিছু আমার জানামতে আমার পরিবারের কাছে ছিল এবং সেগুলো কসমের পরেও অব্যাহত থাকলে কসম ভাঙ্গবে কি না ?

— আমাকে কসম টা যিনি করিয়েছেন তিনি আর আমি এখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইনি। যিনি কসম করিয়েছেন উনার নিয়ত ছিলো বিয়ের আগ পর্যন্ত কিন্তু আমাকে দিয়ে জোর করিয়ে বলিয়েছেন বিয়ের পরেও, আমার মৌখিক বক্তব্যও বিয়ের পর পর্যন্ত ছিলো কিন্তু আভ্যন্তরীণ কোনো নিয়ত এ বিষয়ে আমি করিনি, শুধু বাধ্য হয়ে বলেছি। অতএব আমার এ কসম কি বিয়ের আগ পর্যন্তই কার্যকর হবে নাকি বিয়ের পরেও কার্যকর হবে? এক্ষেত্রে যিনি কসম করিয়েছেন উনার নিয়ত কসমের ক্ষেত্রে সহীহ হবে নাকি আমার মৌখিক বক্তব্য? বিশেষ করে ৩ নাম্বার পয়েন্ট টা একটু ভালো ভাবে জানতে চাই যে, যার সাথে এখনো বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হই নি তার সাথে করা কসমের সময়সীমা কতটুকু হবে? বিয়ের পরেও কি এই কসম অব্যাহত থাকবে না কি ? অর্থাৎ বিয়ের পর উনার অগোচরে অনেক কিছু আমি রাখতেই পারি বা স্ত্রী হিসেবে সেই অধিকার আমি রাখি কিন্তু এই রাখার দ্বারা কসমের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না বা কসম ভঙ্গ হবে কি না ?

* আর এ কসমের বিষয়বস্তু ছিলো অগোচরে পার্সোনাল জিনিসগুলো রাখার দ্বারা সন্দেহ ও দ্বন্দ সৃষ্টি হওয়া।

এখন প্রত্যেকটি পয়েন্টের হুকুম আমি আলাদা করে জানতে চাই কিভাবে কি করলে আমার কসম ভেঙ্গে যাবে আর কিভাবে ভাঙ্গবেনা আর এ কসম কোন মেয়াদ পর্যন্ত কার্যকর হবে? এবং উপরোল্লেখিত শর্তাবলী পাওয়া গেলে কোনটার ক্ষেত্রে কি হুকুম আসবে আর না পাওয়া গেলে কি হুকুম আসবে ? সাবধানতার নিদর্শন সহ বিস্তারিত একটি দালিলিক সমাধান জানতে চাই।

(আল্লাহ তায়ালা হুজুরকে নেক হায়াত দান করুন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বীনের উপর অটল থেকে দ্বীন প্রচারের তাওফিক দান করুন। আমীন)

হুজুর এই মাসআলার উপর নির্ভরশীল আমার বিয়ে হওয়া না হওয়া নিয়ে তাই হুজুরের কাছে আমার আকুল আবেদন যেনো অতি দ্রুত সমাধান দেওয়া হয়

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

শরিয়তে কোন হালাল বস্তুকে বা কাজকে নিজের উপর হারাম করাকে শরীয়তে কসম বলা হয়৷ এবং কসমের সময় নির্দিষ্ট যে বস্তু বা কাজ নিজের উপর হারাম করবে তাই হারাম হবে৷ আর শরীয়তে তালাক দেয়ার অধিকার শুধু স্বামীর, তবে যদি স্বামী স্ত্রীকে নিজের উপর তালাক দেয়ার অনুমতি দেয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতির পরিমান নিজেকে তালাক দিতে পারবে৷ সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত আপনি আপনার হতে যাওয়া স্বামীকে তার নির্দিষ্ট রবি নাম্বার, এবং ছবির ব্যপারে নিজের উপর হারাম করেছেন, তা পাওয়া গেলে বিাহের পর স্বামীর সাথে আপনার সহবাস হারাম হয়ে যাবে৷ তবে বিয়ের মধ্যে কোন প্রভাব পরবেনা, বিবাহ বহাল থাকবে৷ তবে আপনারা পরবর্তীতে মিলিত হলে কসমের কাফ্ফারা দিতে হবে৷ অর্থাৎ ১০ জন মিসকিনকে দু বেলা খাবার বা এক জোড়া কাপড় দেয়া জরুরী৷ অপারগ অবস্থায় তিনটি রোজা রাখা ওয়াজিব৷

১. উনার রবি নাম্বার ব্যাতীত অন্য কোনো নাম্বার, উনার ছবি/ভিডিও ইত্যাদি উনার অজানাতে রাখলে কসম ভেঙ্গে যাবে৷ তবে উনি যদি সেচ্ছায় দেয় তাহলে ভাংবে না৷ কেননা আপনার নিয়ত ছিল পারসোনাল বিষয়, আর যেটা আপনার হতে যাওয়া স্বামী সেচ্ছায় নিবে বা প্রাকাশ করবে সেটা পারসনাল নয়৷ আর আপনার নিয়ত অনুযায়ী আপনার কাছে থাকা ধর্তব্য, অন্য জনের কাছে থাকলে তা কসমের ভিতর আসবে না৷ আর পরিবারের অন্যের ছবি যেহেতু আপনার কসমের মধ্যে উল্লেখ নাই, তাই তা এখানে আসবে না৷

২. আপনি বলেছিলেন রবি ছাড়া অন্য নাম্বার আপনার কাছে রাখবেন না, তাই আপনি না রাখলে কসম ভাংবে না, তিনি যদি কখনো ফোন দেয় অন্য নাম্বার দিয়ে তাহলেও ভাংবে না৷ কেননা আপনি তা নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখেননি, যা আপনি নিয়ত করেছিলেন৷

৩. আপনি বলেছিলেন কসমের খেলাফ করলে হারাম’ বলার দ্বারা কসমের খেলাফ পাওয়া গেলে বিবেহের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসবে না৷ বরং আপনি কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনার হতে যাওয়া স্বামীর সাথে সহবাস হারাম হয়ে যাবে৷ তবে সহবাস করলে কাফ্ফারা দিতে হবে৷

৪. বিবাহের পূর্বে কোন কাজের সাথে হতে যাওয়া স্বামীকে নিজের উপর হারাম করলে হারাম হবে না৷ কেননা যে তার উপর এমনিতে হারাম৷ তবে সর্বদা কোন কাজের সাথে কসম করলে তা বিবাহের পর পাওয়া গেলে কমস ভাংবে৷

৫. আপনি যেহেতু তার নাম্বার বলেছেন সেহেতু তার নাম্বারই কসমে আসবে৷

সুত্রসমূহ

القدوري: رقم 345 واليمين منعقدة هي ان يحلف علي الامر المستقبل ان يفعله او لا يفعله فاذا حنث في ذلك لزمته الكفارة

الدر المختار مع الرد: 3/342 (ومحله المنكوحة) اهله زوج عاقل بالغ مستيقظ. الفتاوي الهندية 2/55 تحريم الحلال يمين كذا في الخلاصة… امرأة قالت لزوجها انت علي حرام او قالت حرمتك علي نفسي فهذا يمين حتي لو طاوعته في الجماع كان عليها الكفارة

فتاوي محمودية: 8/60 الجواب عورت کے کہنے سے کچھ نہیں ہوتا طلاق دینے کا حق مرد کو ہے

فتاوي قاسمیة: 17/62

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

মান্নত করলে পূরণ করা আবশ্যক, মান্নতের রুজু নাই!

ফতওয়া কোডঃ 114-কম-08-05-1443

প্রশ্নঃ

মান্নত করার পর রুজু করা যাবে কিনা? অর্থাৎ আমি মান্নত করলাম অমুক কাজ হলে এত টাকা সদকা করবো, এখন এই মান্নত পূর্ন হওয়ার আগেই আমি এই মান্নত থেকে রুজু করতে চাই, এখন রুজু করা যাবে কি না? রুজু করা গেলে এর নিয়ম কি?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

মান্নত করার পর উক্ত মান্নত পূর্ন হওয়ার আগেই রুজু করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাই মান্নত পূর্ন হওয়ার পর অবশ্যই সদকা বা মান্নতের সময় শর্ত করা ইবাদত পালন করা অত্যাবশ্যক ও জরুরী।

সুত্রসমূহ

سورة الحج: 29 ثُمَّ لْيَقْضُوا۟ تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا۟ نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا۟ بِٱلْبَيْتِ ٱلْعَتِيقِ

التفسير المظهرى: 6/206 والنذر فى معنى الطلاق والعتاق لأنه لا يحتمل الفسخ بعد وقوعه

المبسوط للسرخسى: 24/42 والنذر……. ولا يحتمل الفسخ بعد وقوعه

البحر الرائق: 2/518 والنذر فى معنى الطلاق والعتاق لأنه لا يحتمل الفسخ بعد وقوعه

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

কসমের কাফফারার টাকা দিয়ে গরিব ছাত্রকে কিতাব কিনে দেয়া!

ফতওয়া কোডঃ 80-কমা-09-02-1443

প্রশ্নঃ আমার কসমের কাফফারার সমপরিমান টাকা দিয়ে কোন গরিব ছাত্রকে কিতাব কিনে দিতে পারবো কি? কিনে দিলে কাফফারা আদায় হবে কি?

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআন সুন্নাহ মুতাবিক সঠিক ভাবে হিসাব করে আপনার কসমের কাফফারার সমপরিমান টাকা বের করে সেই টাকা দিয়ে কোন গরিব ছাত্রকে কিতাব কিনে দিলে আপনার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।

সূত্রঃ আদদুররুর মুখতারঃ ৩/৭২৬, রদ্দুল মুহতারঃ ৩/৭২৬, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাতঃ ৭/৩৬২-৩৬৩

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading