এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

তাকবিরে তাহরিমা ছারা রফউল ইয়াদাইন না করলে গুনাহ হবে, এটা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বক্তব্য?

ফতওয়া কোডঃ 112-ইকো-06-05-1443

প্রশ্নঃ

জনৈক লা-মাজহাবী, ডাঃ জাকের নায়েকের সহযোগী শহীদুল্লাহ খান মাদানীর লেখা “মাসনূন সালাত ও দুআ শিক্ষা” বইয়ের ৮২ নং পৃষ্ঠার ২৮৫ নং টীকার ভিত্তিতে বলা আছে আল্লামা আঈনী রহ. বলেছেনঃ

“ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেনঃ রফউল ইয়াদাইন ত্যাগ করলে গুনাহ হবে।”

সুত্রঃ উমদাতুল ক্বারী, দারুল ফিকর প্রকাশনী- ৫/২৭২, আঈনী তুহফা– ১/১৩১

জানার বিষয় হলো এটা ঠিক কি না?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

আমরা খুব ভালভাবে খুজে দেখেছি, এমন কোন কথা উমদাতুল কারী কিতাবের কোথাও পাইনি, মূলত এগুলো লা-মাজহাবী শায়খদের মূর্খতা ও মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।

যুগযুগ ধরে এই ফিতনাবাজরা উম্মতকে সহিহ হাদিসের নামে ধোকা দিয়ে আসছে, আমরা উমদাতুল কারী কিতাবের মূল ইবারত নিচে লিখে দিচ্ছি, মেহেরবানী করে খুব ভালভাবে মিলিয়ে নিবেন।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. তার গ্রন্থ “উমদাতুল কারী” তে রফউল ইয়াদাইন বিষয়ে লিখেনঃ-

وَفِي (التَّوْضِيح) : ثمَّ الْمَشْهُور أَنه لَا يجب شَيْء من الرّفْع، وَحكى الْإِجْمَاع عَلَيْهِ، وَحكى عَن دَاوُد إِيجَابه فِي تَكْبِيرَة الْإِحْرَام، وَبِه قَالَ ابْن سيار من أَصْحَابنَا، وَحكي عَن بعض الْمَالِكِيَّة، وَحكي عَن أبي حنيفَة مَا يَقْتَضِي الْإِثْم بِتَرْكِهِ.

অর্থাতঃ প্রসিদ্ধ কথা হল, (নামাজে) কোন রফউল ইয়াদাইন করাই ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে ইজমাও নকল করা হয়েছে। দাউদ থেকে বর্ণিতঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় রফউল ইয়াদাইন করা ওয়াজিব। একথাটি হানাফী মাযহাবের মাঝে ইবনুস সাইয়্যারেরও বক্তব্য। কতিপয় মালেকী ফক্বীহগণও একই বক্তব্য প্রদান করেন, আর ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে বর্ণিত যে, তাকবীরে তাহরিমার সময় রফউল ইয়াদাইন করা ছেড়ে দিলে ব্যক্তির গুনাহ হবে।

উমদাতুল কারীতে আরো উল্লেখ আছেঃ-

عند أبي حنيفَة وَأَصْحَابه: لَا يرفع يَدَيْهِ إِلَّا فِي التَّكْبِيرَة الأولى، وَبِه قَالَ الثَّوْريّ وَالنَّخَعِيّ وَابْن أبي ليلى وعلقمة بن قيس وَالْأسود بن يزِيد وعامر الشّعبِيّ وَأَبُو إِسْحَاق السبيعِي وخيثمة والمغيرة ووكيع وَعَاصِم بن كُلَيْب وَزفر، وَهُوَ رِوَايَة ابْن الْقَاسِم عَن مَالك، وَهُوَ الْمَشْهُور من مذْهبه والمعمول عِنْد أَصْحَابه، وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: وَبِه يَقُول غير وَاحِد من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالتَّابِعِينَ، وَهُوَ قَول سُفْيَان وَأهل الْكُوفَة. وَفِي (الْبَدَائِع) : رُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس أَنه قَالَ: الْعشْرَة الَّذين شهد لَهُم رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالْجنَّةِ مَا كَانُوا يرفعون أَيْديهم إلاّ فِي افْتِتَاح الصَّلَاة وَذكر غَيره عَن عبد الله بن مَسْعُود أَيْضا وَجَابِر بن سَمُرَة والبراء بن عَازِب وَعبد الله بن عمر وَأَبا سعيد، رَضِي الله تَعَالَى عَنْهُم،

অর্থাতঃ ইমাম আবু হানীফা রহ. ও তার আসহাবদের মতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করবে না, একই বক্তব্য দিয়েছেন, হযরত ইমাম সুফিয়ান সওরী রহ., ইমাম ইবরাহীম নখয়ী রহ., ইমাম ইবনে আবী লাইলা রহ., হযরত আলকামা বিন কায়েস রহ., হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ রহ., হযরত আমের শাবী রহ., হযরত আবু ইসহাক সাবিয়ী রহ., হযরত খাইছামা রহ., হযরত মুগিরাহরহ. , হযরত ওয়াকী রহ.’, আসেম বিন কুলাইব, যুফার। ইমাম মালিক রহ. থেকে ইবনুল কাসিম একথাই বর্ণনা করেছেন। এটাই মালেকী মাযহাবে মাশহুর এবং তার অনুসারীদের মাঝে মা‘মুল। হযরত ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন, একাধিক সাহাবী রা. ও তাবেয়ীগণের বক্তব্যও তাই। একই মতের প্রবক্তা হযরত সুফিয়ান সওরী রহ. এবং কুফাবাসীগণ। আর বাদায়ে গ্রন্থে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করতেন না। এছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., হযরত জাবির বিন সামুরা রা., হযরত বারা বিন আযেব রা., হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. এবং হযরত আবু সাঈদ রা. থেকেও একই কথা প্রমানিত।

বোঝা গেলো ইসলাম ও উম্মতের শত্রু শহীদুল্লাহ খান মাদানীর উপরক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি নাই, আর তার বক্তব্য সম্পূর্ন মিথ্যাচার ও মুর্খতা বৈ কিছুই নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সকল প্রকার ফিতনাবাজদের ফিতনা থেকে হিফাজত করুন, আমিন।

সুত্রসমূহ

عمده القاري: 5/9 وَفِي (التَّوْضِيح) : ثمَّ الْمَشْهُور أَنه لَا يجب شَيْء من الرّفْع، وَحكى الْإِجْمَاع عَلَيْهِ، وَحكى عَن دَاوُد إِيجَابه فِي تَكْبِيرَة الْإِحْرَام، وَبِه قَالَ ابْن سيار من أَصْحَابنَا، وَحكي عَن بعض الْمَالِكِيَّة، وَحكي عَن أبي حنيفَة مَا يَقْتَضِي الْإِثْم بِتَرْكِهِ.

وفيه ايضا: وَعند أبي حنيفَة وَأَصْحَابه: لَا يرفع يَدَيْهِ إِلَّا فِي التَّكْبِيرَة الأولى، وَبِه قَالَ الثَّوْريّ وَالنَّخَعِيّ وَابْن أبي ليلى وعلقمة بن قيس وَالْأسود بن يزِيد وعامر الشّعبِيّ وَأَبُو إِسْحَاق السبيعِي وخيثمة والمغيرة ووكيع وَعَاصِم بن كُلَيْب وَزفر، وَهُوَ رِوَايَة ابْن الْقَاسِم عَن مَالك، وَهُوَ الْمَشْهُور من مذْهبه والمعمول عِنْد أَصْحَابه، وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: وَبِه يَقُول غير وَاحِد من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالتَّابِعِينَ، وَهُوَ قَول سُفْيَان وَأهل الْكُوفَة. وَفِي (الْبَدَائِع) : رُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس أَنه قَالَ: الْعشْرَة الَّذين شهد لَهُم رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالْجنَّةِ مَا كَانُوا يرفعون أَيْديهم إلاّ فِي افْتِتَاح الصَّلَاة وَذكر غَيره عَن عبد الله بن مَسْعُود أَيْضا وَجَابِر بن سَمُرَة والبراء بن عَازِب وَعبد الله بن عمر وَأَبا سعيد، رَضِي الله تَعَالَى عَنْهُم

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top