আসসালাম আলাইকুম। আমার এলাকায় অনেক বিখ্যাত এক মুফতি সাহেরের একটি খানকাহ আছে। সেখানে একটি মাদরাসা আছে। উক্ত খানকাহতে মহিলাদের জন্য আলাদা মজলিস, ইসলাহী ও ইলমি আলোচনা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১লা মার্চ মহিলাদের একটি এসলাহি মজলিস আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে শবে বারাআত, রমাযান সম্পর্কে আলোচনা হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম মজলিস ইসলাম সমর্থন করে কিনা, যায়েজ নাকি নাজায়েজ ?
সমাধানঃ
بسم اللہ الرحمن الرحیم
প্ৰশ্নে উল্লেখিত খানকাহটা যদি শরিয়ত মুতাবিক পরিচালিত হয়, এবং সেখানে কোন শরিয়ত গর্হিত কোন কাজ না হয় ও শরয়ী পৰ্দা লংঘন না হয় এবং দূর দুরান্ত থেকে যে সকল মহিলারা আগমন করেন তারা যদি স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সাথে আসেন, তাহলে মহিলাদের দ্ধীনি ইলম অৰ্জনের জন্য দিন নিৰ্ধারন করে এ রকম মজলিস এর ব্যবস্থা করা জায়েয আছে। এবং তা শরিয়ত বিরোধী নয়। তবে ফিৎনা থেকে বাচার জন্য নিজ মহল্লায় এমন মজলিস করা যেতে পারে, দূরে সফর করা মারাত্বক ক্ষতির আশংকা বহন করে, নিশ্চিত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে এমন সফর জায়েয নেই।
হাদীস শরীফে বৰ্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা সাহাবীদের রা. তালীম তরবিয়াতের জন্য একটি দিন নিৰ্ধারন করেছিলেন, উক্ত মসলিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে ভিবিন্ন ওয়াজ নসিহত এবং গুরুত্বপূর্ন কাজের আদেশ নিষেধ করতেন।
সুত্রসমূহ
صحيح البخاري: رقم الحديث 101 عن أبي سعيدٍ الخُدريِّ – رضي الله عنه – قال: قالتِ النِّساءُ للنبيِّ – صلى الله عليه وسلم -: غَلَبَنا عليك الرجال، فاجعلْ لنا يومًا من نفسك؛ فوعدهنَّ يومًا لقيهنَّ فيه، فوعظهنَّ وأمرهنَّ
عمدة القاري: 2/124 “قال النووي: فيه استحباب وعظ النسآء و تذكيرهن الآخرة و أحكام الإسلام و حثهن علي الصدقة، و هذا إذا لم يترتب علي ذلك مفسدة أو خوف فتنة علي الواعظ أو الموعوظ و نحو ذلك”
فتاوی محمودیہ: 3/377 الجواب: جائز ہے، حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم سے بکثرت ثابت ہے، لیکن اگر فتنہ کا اندیشہ ہو تو احتیاط کرنا چاہیے
হযরত মাওলানা ইলইয়াস রহ. এর তাবলীগ কি নবীওয়ালা কাজ? হাদিসে কি এর কোন প্রমান আছে?
সমাধানঃ
بسم اللہ الرحمن الرحیم
হযরত মাওলানা ইলইয়াস রহ. এর তাবলীগকে নবীওয়ালা কাজ বলা যায়, হযরত আনস রা. ও আরেকজন সাহাবীর হাদিসে এর স্পষ্ট প্রমান আছে। কুরআন ও হাদিসের অনেক নির্দেশনা দ্বারাও প্রমানিত।
সুত্রসমূহ
سنن الترمذي: 2/156 عن أنس بن مالک رضی اللہ عنہ أن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کان یمر بباب فاطمة لستة أشہر إذا خرج لصلاة المفجر یقول: الصلاة! یا أہل البیت! إنما یرید اللہ لیذہب عنکم الرجل أہل البیت ویطہرکم تطہیرًا
سنن ابی داؤد: 1/179 عن مسلم بن أبي بکرة عن أبیہ قال: خرجت مع النپی صلی اللہ علیہ وسلم لصلاة الصبح، فکان لا یمر برجل إلا ناداہ بالصلاة أو حرّکہ برجلہ
মাসতুরাত জামাআত বা নারীদের দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করা কেমন? জানতে চাই!
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
মাসতুরাত জামাআত নাজায়েয সম্বন্ধে বিশ্ব বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রকাশিত একটি ফতওয়া নিচে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে, নিম্নক্ত ফতওয়ার সাথে রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ফাতওয়া বিভাগের মুফতি সাহেবগন একাত্বতা পোষন করছেন।
“প্রশ্ন : সম্মানিত মুফতি সাহেব, আমাকে একটি কথা বুঝিয়ে দিন যে, নারীদের জন্য ৩ দিনের জন্য, ৪০ দিনের জন্য বা ১০ দিনের জন্য নিজের মাহরামের সাথে জামাতে যাওয়া কেমন? শরিয়ত কি ইহার অনুমতি দিয়েছে? পবিত্র হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃগনের আমল দ্বারা প্রমাণিত কি? বিস্তারিত জানালে ভাল হয়!
উত্তরঃ নারীদের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুরের সর্বসম্মতিক্রমে, সম্মিলিত ফতওয়া নিচে দেয়া হল৷
নারীদের দাওয়াত ও তাবলীগের সফর করা সম্পর্কে হযরত মাওলানা মুফতি সায়্যিদ মাহাদী হাসান রহঃ (সদর মুফতি, দারুল উলুম দেওবন্দ) এর ফতওয়া, হযরত মাওলানা মুফতি সাঈদ আহমদ রহঃ (মুফতিয়ে আজম, মাজাহিরুল উলুম সাহরানপুর) ও হযরত মাওলানা আব্দুল লতিফ রহঃ (নাযিমে আ’লা, মাজাহিরুল উলুম সাহরানপুর) এর পরিপুর্ন সমর্থন ও সত্যায়ন৷
প্রশ্ন : উলামায়ে দ্বীন এবং শরীয়তের যোগ্য মুফতি সাহেবগণ, নারীদের মাহরামের সাথে দাওয়াত ও তাবলীগের সফর করার ব্যাপারে কি বলেন?
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এবং তাবেঈন রহঃগনের জামানায় নারীরা তবলিগের জন্য সফর করতেন না, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ নারীদেরকে তাবলীগের জন্য কোথাও সফর করার নির্দেশ দেননি, এবং নিজেরাও নারীদেরকে তাবলিগের জন্য সফরে পাঠাননি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃগনের এই আমল থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য সফর করা জায়েয নেই৷ খইরুল কুরুনে যখন নারীদের কোন মাসআলা-মাসাইল জানার প্রয়োজন হতো, তখন তারা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ ও সাহাবায়ে কিরাম রাঃগনের স্ত্রীদের থেকে জেনে নিতেন, ওই জামানায় তাবলীগ শুধু পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট-নির্ধারিত ছিল, নারীরা পর্দার সাথে শরীয়তের আহকাম সমূহ জেনে, দ্বীনী বিষয় সমূহ শিক্ষা করতো, পুরুষদের কাজ ছিল, নিজে দ্বীনী বিষয়ে যতটুকু জ্ঞানী, তা স্ত্রীগণকে জানাতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃগণ তাবলীগের জন্য সফর করতেন, জিহাদে যেতেন, কিন্ত ব্যাপকভাবে নারীদেরকে নিজেদের সাথে সফরে নিয়ে যেতেন না, খইরুল কুরুনেই যদি এই অবস্থা! তাহলে এই ক্ষতিকর ও ফিতনার যামানায় তাবলিগের জন্য সফর করা, যদিও তা মাহরামের সাথেই হোকনা কেন? কি ভাবে যায়েজ হতে পারে? এ ধারনা মনে আনা যে, তাহলে নারীদের জন্য তাবলিগ কিভাবে করতে হবে? এই ভিত্তিতে তাদের জন্য তাবলিগ শুদ্ধ নয় যে, তাদের পুরুষেরা তাদের তাবলিগ করবে, তাদেরকে দ্বীনের আহকাম সমূহ শিক্ষা দিবে, এবং পুরুষ নিজে দ্বীনি বিষয় সমূহ যারা জানেন তাদের থেকে শিখবে, এবং নিজে শিক্ষা করা ও অন্যকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সফর করবে, অন্যথায় নারীদের তাবলিগের জন্য ব্যাপকভাবে সফর করা, ফেতনার দরওয়াজা সমূহ খুলে দেয়ার মতো, যা বর্তমানে দুনিয়াব্যাপি সুদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যাক্তিরা প্রত্যক্ষ্য দেখতে পারছেন৷
উপরক্ত ফতওয়া সঠিক : পরিপুর্ন সমর্থন ও সত্যায়নে : হযরত মাওলানা মুফতি সাঈদ আহমদ রহঃ (মুফতিয়ে আজম, মাজাহিরুল উলুম সাহরানপুর), ও হযরত মাওলানা আব্দুল লতিফ রহঃ (নাযিমে আ’লা, মাজাহিরুল উলুম সাহরানপুর)
নোটঃ উপরোক্ত দুই হযরাতের সমর্থন ও সত্যায়ন, মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর এর দারুল ইফতায় সংরক্ষিত!
—মুফতি হাবিবুর রহমান খয়রাবাদী দাঃ বাঃ, তারিখ : ২৩/০৩/১৪৩২ হিঃ
ফতওয়াটি যেভাবে নকল করা হয়েছে তা সম্পুর্ন সঠিক, সত্যায়নেঃ মুফতি জয়নুল ইসলাম কাসেমী দাঃ বাঃ, নায়েবে মুফতি, দারুল উলুম দেওবন্দ৷ তারিখ : ২৮/১১/৩২ হিঃ
প্রশ্ন : আমি কি আমার স্ত্রীকে নিয়ে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে যেতে পারব? নারীদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগে নিয়ে যাওয়া উচিত কিনা? এ ব্যাপারে উলামায়ে দ্বীন কি বলেন?
উত্তর : حامدا و مصليا و مسلما, নারীদেরকে জামায়াতে নিয়ে যাওয়া দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য এবং পছন্দনীয় নয়, এবং و اثمهما اكبر من نفعهما (সুরা বাকারা, আয়াত ২১৯) এর মতো, আর নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়ে থাকে৷ فقط
উপরে উল্লেখিত ফতওয়া ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দারুল ইফতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারীদের তাবলীগের নাম দিয়ে ঘরের বাইরে ছেড়ে দেওয়া শরীয়ত সম্মত হবে না৷ নিজ ঘরে মহিলাদের তা’লিম করাই মহিলাদের জন্য দাওয়াতের কাজ৷ ঘরের বাইরে গিয়ে তা’লিম করাকেও শরীয়ত সমর্থন করেনা বিধায় তা বর্জনীয়৷