এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

গ্রাচুয়িটি, জিপি ফান্ড, ছুটি নগদায়ন ইত্যদি পেনশনের মিরাস জারী হবে কি?

ফতওয়া কোডঃ 132-ওও-08-06-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মরহুম সিনিয়র অফিসার হিসেবে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন, মারা গেছেন অক্টোবর ২০১৬ ইং তে। তিনি ১ জন স্ত্রী, ১ জন ছেলে, ১ জন মেয়ে, ২ জন ভাই, ৩ জন ভাতিজা ও ২ জন ভাতিজি রেখে যান।
অসিয়তঃ উল্লেখযোগ্য কোন অসিয়ত করে যাননি, বেঁচে থাকতে বলতেন টাকা পেলে সেখান থেকে তার একজন ভাইকে কিছু টাকা দিবেন। টাকা পাওয়ার পর সেই ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
ঋণঃ জমি বন্ধক/কট রাখা ছিল ৬০ হাজার টাকা দিয়ে, টাকা পাওয়ার পর ৬০ হাজার টাকা দিয়ে সেটা বের করা হয়েছে।

মরহুমের মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পর নিম্নোক্ত খাতে টাকাগুলো তার স্ত্রীর একাউন্টে জমা হয়।
সময়ঃ ১২ জুন ২০১৮ ইং

গ্রাচুয়িটি/এককালীন পেনশনঃ ৪২২৬৯৪০/-

জিপি ফান্ড (বেতন থেকে বাধ্যতামূলক কর্তনঃ) ১৮০৮১১/-
সর্বমোটঃ ৪৪০৭৭৫১/-

এই টাকা পাওয়ার পরঃ
১. মরহুমের ভাই এর জন্য ৫ লক্ষ টাকা,
২. মরহুমের জন্য সাদাকাহ ৫০,০০০ টাকা,
৩. জমি বন্ধক থেকে মুক্ত করতেঃ ৬০ হাজার টাকা,
খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকাঃ ৩৭৯৭৭৫১/- বেঁচে থাকে।

১. এই টাকার বন্টন কিভাবে হবে?

২. ১৫ মার্চ ২০২০ ইং হতে ছুটি নগদায়ন এর প্রাপ্য অর্থ হিসেবে কিছু টাকা মরহুমের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়, যার পরিমাণঃ ৪৬৬৬৮০/- (চার লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৮০ টাকা) এই টাকার বন্টন কিভাবে হবে?

৩. প্রতিমাসে মরহুমের স্ত্রী পেনশনের যে ভাতা পেয়ে থাকেন সেটা কি বন্টনযোগ্য? নাকি সেটার মালিকানা সম্পূর্ণ মরহুমের স্ত্রী?

উল্লেখ্য যে, স্ত্রীর একাউন্টে ব্যাংক যে টাকা পাঠিয়েছে সেটা পরিবারের সকলকে মালিক বানিয়ে পাঠিয়েছে, স্ত্রীকে এককভাবে মালিক বানিয়ে পাঠায় নাই।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের সাথে চারটি হক সম্পৃক্ত যথাঃ ১. সর্বপ্রথম তার সম্পদ থেকে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. অতঃপর সামষ্টিক সম্পদ থেকে তার ঋণ পরিশোধ করতে হবে (যদি মরহুমের জীবদ্দশায় কোন ঋণ থাকে) ৩. অতঃপর অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা বৈধ ওসিয়ত পূরণ করা হবে। ৪. অবশিষ্ট সম্পদ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ওয়ারিশদের মাঝে বন্টিত হবে।

১. প্ৰশ্নে উল্লেখিত বিবরন অনুযায়ী মরহুমের মৃত্যুর দুই বছর পরে তার স্ত্রীর এ‌কাউন্টে গ্ৰাচুয়াটি বা এককালীন পেনশন এবং জিপি ফান্ড থেকে মোট ৪৪০৭৭৫১ টাকা জমা হয়েছে। আবার তা থেকে মরহুমের ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা, মরহুমের জন্য সাদকা ৫০ হাজার টাকা, জমি বন্ধক মুক্ত‍‍‍ করতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করার পরে মোট বাকি ৩৭৯৭৭৫১ টাকাকে তার নিকটতম আত্বীয়দের মাঝে কি ভাবে বন্টন করা হবে, কে কতটুকু অংশ পাবে তা শরিয়ত স্পষ্ট ভাবে কুরআন ও হাদীসে বর্ননা করা হয়েছে। সুতরাং প্ৰশ্নের বিবরন অনুযায়ী মরহুম তার মৃত্যুর সময় ওয়ারিশ হিসাবে একজন স্ত্রী, একজন মেয়ে, একজন ছেলে, আর দুই ভাই, এবং তিনজন ভাতিজা , দুই জন ভাতিজী রেখে গেছেন। শরিয়তের দৃষ্টিতে মৃত ব্যাক্তির ছেলে জিবীত থাকতে মৃত ব্যক্তির ভাই এবং তাদের সন্তানেরা মৃত ব্যাক্তি থেকে কিছুই পাবেনা। আর বাকি একজন স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ের মাঝে মোক টাকা এই ভাবে ভাগ করা হবে যে, প্ৰথমে স্ত্রী মোট টাকার আট শতাংশ অর্থাৎ আট ভাগেৱ এক ভাগ। এরপর বাকি যে টাকা থাকবে তা তিন ভাগে ভাগ হবে। সেই তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে ছেলে, আর একভাগ পাবে মেয়ে। সুতরাং সেই হিসাব অনুযায়ী স্ত্রী মোট টাকা থেকে ৪৭৪৭১৮.৮ টাকা পাবে, মেয়ে পাবে ১১০৭৬৭৭.৪ টাকা, বাকি ২২১৫৩৫৪.৭ টাকা ছেলে পাবে।

২. প্ৰথমে জানতে হবে ছুটি নগদায়ন এর অর্থ কি? বা কাকে বলে? লাম্প গ্ৰান্ট/ছুটি নগদায়ন হলো একজন সরকারি কর্মচারী পেনশন এর উদ্দেশ্যে পি আর এল (অবসর) গমনের পর যদি অর্জিত ছুটি পাওনা থাকে তবে তাকে সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মূল বেতনেৱ পরিমান অর্থ প্ৰদান করা হয়ে থাকে, যাকে লাম্প গ্ৰ্যান্ট বা ছুটি নবায়ন বলে। সরকারি চাকরীজীবিদের চাকরী কালিন অর্থ গড় বেতনে প্ৰায় ৪/৫ বছর ছুটি জমা হয়। পেনশন গ্ৰহন কালিন এ ছুটি সরকারের নিকট শেষ মূল বেতন হিসাবে বিক্ৰি করা যায়। চাকরীর ২৫ বছর পুর্ন হওয়ার পরই ছুটি প্ৰাপ্যতা অনুসারে সর্বোচ্চ ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন (বিক্ৰি) করে টাকা নেওয়া যায়। অনুরুপ ভাবে অর্থ বিভাগের ২২-৪-১৯৮৫ ইং তাৱিখের অম/অবিপ্ৰবি ২/ছুটি_১৬_৮৪_৭৬ নম্বর পত্ৰ অনুযায়ি ১-৬-৮৪ ইং তারিখ বা উহার পরে চাকরীরত অবস্থায় কোন সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী মৃত্যুবরন করিলে অর্থ বিভাগের ২১-১-৮৫ তারিখের অম/অবি/প্ৰবি২/ছুটি_১৬_৮৪_৯ নম্বর স্মারকের আওতায় মৃত্যবরনের তারিখে অবসর গ্ৰ্‌হন ধরিয়া পাওনা সাপেক্ষে ছুটির বদলে তাহার প্ৰাপ্য নগদ অর্থ তাহার পরিবারকে প্ৰদান করা যাইতে পারে।এই ক্ষেত্ৰে ”পরিবার” বুঝাইতে পারিবারিক পেনশন প্ৰদান নিমিত্তে পেনশন বিধিতে প্ৰদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী পরিবার বুঝাইবে। সুতরাং উপরোক্ত‍‍‍ আলোচনা থেকে জানা গেলো যে ছুটি নগদায়ন বাবদ যে টাকা পাওয়া যায় তা মূলত ঐ চাকরীজিবীর অর্জিত সম্পদ যা তার মৃত্যুর পরে তার ওয়ারিশদের (পরিবারের) মাঝে শরিয়ত মুতাবিক বন্টন যোগ্য। অত‌এব প্ৰশ্নে উল্লেখিত মরহুমের স্ত্রীর একাউন্টে ছুটি নগদায়ন বাবধ যে টাকা জমা হয়েছে তা মরহুমের ওয়ারিশদের মাঝে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী বন্টন করতে হবে। আর এখানে মরহুম এর ওয়ারিশ বলতে তার একজন স্ত্রী, একজন ছেলে, একজন মেয়ে, (আৱ তার দুই ভাই এবং তাদের সন্তানেরা মৃত ব্যাক্তির ছেলে জিবীত থাকার কারনে মাহরুম হবে। কিছুই পাবেনা) সুতরাং স্ত্রী উক্ত টাকার আট শতাংশ অর্থাৎ আট ভাগেৱ এক ভাগ পাবে। তারপর যে টাকা বাকি থাকবে তা তিন ভাগ করতে হবে। সেই তিন ভাগের দুই ভাগ ছেলে পাবে। আর একভাগ মেয়ে পাবে। সুতরাং উক্ত হিসাব অনুযায়ি স্ত্রী পাবে ৫৮৩৩৫ টাকা‌। আর মেয়ে পাবে ১৩৬১১৫ টাকা , আর বাকী ২৭২২৩০ টাকা ছেলে পাবে।

৩. শরিয়তের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির সম্পদের মাঝে ব্যবসায়িক সমপত্তি স্থাবর-অস্থাবর, নগদ অর্থ, ব্যাংক ব্যালেন্স, এবং পেনশন সবই শামিল। সুতরাং পেনশন হিসাবে মরহুমের স্ত্রীর একাউন্টে প্ৰতিমাসে যে টাকা জমা হয় তা শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী মরহুমের ওয়ারিশদের মাঝে বন্টনযোগ্য। শুধু স্ত্রী এর মালিক এমনটি নয়। আর পারিবারিক পেনশন প্ৰাপ্তির যোগ্য ব্যাক্তি এবং প্ৰাপ্তির শর্তাদি স্মাৱক নং ২৫৬৬(৪০) এফ তারিখ ১৬ই এপ্ৰিল ১৯৫৯ সেকশন ২ এর অনুচ্ছেদ ৫ তে বিধানে যারা পেনশনের উত্তোরাধীকারী হতে পারে তার মধ্যে কর্মচারির স্বামী বা স্ত্রী, এবং তাদের সন্তানাদী উল্লেখযোগ্য।অত‌এব বোঝা গেলো যে, পেনশনের টাকাও ওয়ারিশদেৱ মাঝে বন্টনযোগ্য, স্ত্রীর একা মালিকানাধীন নয়।

সুত্রসমূহ

سورة النساء: 11 يوصيكم الله في اولادكم للذكر مثل حظ الانثيين

سورة النساء: 12 ولهن الربع مما تركتم ان لم يكن لكم ولد.فان كان لكم ولد فلهن الثمن مما تركتم مم بعد وصيية توصون بها او دين

السراجي: 17 بنوا الاعيان والعلات كلهم يسقطون بالابن وابن الابن وان سفل

رد المحتار علی الدر المختار: 10/493 الترکۃ في الاصطلاح ما ترکہ المیت من الأموال صافیا عن تعلق الغیر بعین من الأموال

الموسوعة الفقهية الكويتية: 30/254 اختلف الفقهاء في الوصية بالزائد على الثلث للأجنبي على قولين : القول الأول : إن الوصية للأجنبي في القدر الزائد على الثلث تصح وتنعقد ، ولكنها تكون موقوفة على إجازة الورثة ، فإن لم يكن له ورثة نفذت دون حاجة إلى إجازة أحد ، وهذا هو مذهب الحنفية

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top