ফতওয়া কোডঃ 139-তাত,প-28-06-1443
প্রশ্নঃ
১. বাচ্চার বমি কি নাপাক?
২. কাপড়ে বমি লাগলে ঐ কাপড় নাপাক?
৩. বাচ্চার কপালে কালো টিপ দেয়া জায়েয?
৩. বাচ্চার জন্য এত কষ্ট মেহনত করা কি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত?
৪. বাচ্চার লালন-পালনের কষ্টে সবর করলে কি আখিরাতে তার জাযা পাওয়া যাবে?
সমাধানঃ
بسم اللہ الرحمن الرحیم
১. বাচ্চার বমি নাপাক।
২. (ক) কাপড়ে বমি লাগলে কাপড় নাপক হয়ে যাবে, কারন বমি নাপক। (খ) কাপড়ে নাপাক লেগেছে কিন্তু তা শুকিয়ে যাওয়ার কারনে নিশ্চিত ভাবে ঐ নাপাকের জায়গা বোঝা যাচ্ছেনা, তাহলে এ ক্ষেত্ৰে পুরা কাপড়টাই ধৌত করতে হবে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন যে, ان خفي عليه مكانه و علم انه قد اصابه. غسل الثوب كله অর্থঃ যদি নাপাকীর জায়গা অজ্ঞাত হয়ে যায় তবে নিশ্চিত ভাবে জানা থাকে যে কাপড়ে নাপাক লেগেছিল, তাহলে পুরো কাপড় ধৌত করতে হবে। (গ) সর্বদা পবিত্ৰ কাপড় পরিধান করা উত্তম এবং তা শরীয়তে অনেক পছন্দনীয় আমল, তবে প্ৰশ্নোক্ত ক্ষেত্ৰে যেহেতু আপনার বারবার কাপড় পরিবর্তন করা কষ্টকর হচ্ছে, সে ক্ষেত্ৰে আপনি নামাযের জন্য পাক পবিত্ৰ এক জোড়া কাপড় রেখে দিবেন, নামাযের সময় হলেই ঐ পাক পবিত্ৰ কাপড় পড়ে নামায পড়বেন, তারপর আপনি অন্যান্য সময় অন্য কাপড় পরিধান করতে পারেন।
৩. বাচ্চাদের কপালে কালো টিপ দেওয়া জায়েয নেই, এটি নিছক কু-সংস্কার ছাড়া কিছু না, একজন মুসলিম হিসাবে এ জাতীয় কু-সংস্কার পরিহার করা উচিৎ, কারন এটি হিন্দুদের প্ৰথা ও সাংস্কৃতি। দ্বিতীয়তো এটি বদ নজরকে রোধ করতে পারেনা। শিশুকে বদ নজর ইত্যাদি থেকে রক্ষা করার জন্য কি করতে হবে রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শিক্ষা দিয়েছেন, হাদীসে এসেছে রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাসান ও হুসাইন রা. এর জন্য এই দুআ করতেন اعيذ كما بكلمات الله التامة من كل شيطان و هامة ومن كل عين لامة
অন্য হাদীসে বর্নিত হযরত জিব্ৰাঈল আঃ কর্তৃক রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঝাড়-ফুকের দুআ দ্বারাও শিশুকে ঝাড় ফুক দেওয়া যেতে পারে, আয়াতুল কুরসী এবং সুরা নাস-ফালাক, ইখলাস পড়েও শিশুকে বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য ঝাড়-ফুক দেওয়া যেতে পারে।
৪+৫. সন্তান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিয়ামত এবং পিতা মাতার নিকট আমানত, পিতা মাতার কর্তব্য হলো সন্তানকে আল্লাহর ফরমাবরদার বান্দা হিসাবে গড়ে তোলা, শয়তানের সব ধরনের গোলামী থেকে দুরে রাখা, শয়তান চায় প্ৰততেকটা মানব শিশুকে অংকুরেই ধ্বংস করতে, সুতরাং শয়তান যেন মানব শিশুকে পথ ভ্ৰষ্ট করতে না পারে। এই জন্য পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সন্তানকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্ৰকৃত মানুষ রুপে তৈরী করে যাওয়া। আর এ ক্ষেত্ৰে যদি কোন ধরনেন অবহেলা/কমতি দেখা যায় তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে।
মোটকথা সন্তান-সন্ততি পিতা মাতার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত, তাদের ঈমান-আকিদা, বোধ-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, আমল-আখলাক, জীবন-যাপন প্ৰভৃতির ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া মাতা-পিতার কর্তব্য। আর এই কর্তব্য পালন করতে যেয়ে সন্তান-সন্ততিকে (লালন পালন করতে যেয়ে) যত শ্ৰম-সাধনা, মেহনত-মুজাহাদা এবং অর্থ-পয়সা খরচ করবে তা (ইবাদত) তথা সাদকাহ এর অন্তর্ভুক্ত। এবং তাতে সদকাহ এর সাওয়াব পাওয়া যাবে, আখিরাতে নাজাতের উসিলা হবে, সন্তান-সন্ততির জন্য যা খরচ করা হয় তা সর্বশ্ৰেষ্ট দান, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত, এক হাদীসে নবী করিম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার দাস মুক্তির কাজে ব্যায় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ, আর একটি দিনার তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ, এর মধ্যে যে দিনারটি তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ তার সাওয়াব বেশী। আম্মাজান হযরত আইশা রা. থেকে বর্নিতঃ সন্তান-সন্ততির প্ৰতি অনুগ্ৰহ করলে জান্নাত লাভ হয় এবং জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়। হযরত আবু উমামাহ রা. থেকে বর্নিতঃ রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অনিষ্টতা ও খারাপ থেকে বেচে থাকার জন্য যে ব্যাক্তি নিজের জন্য খরচ করল তা তার জন্য সাদকাহ, এবং যে ব্যাক্তি নিজ স্ত্ৰী, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিছু খরচ করল তা তার জন্য সাদকাহ হিসাবে পরিগনিত হবে।
সুত্রসমূহ
الفتاوي الهنديية: الصبي اذا قاء على ثدي .الام ثم مصي الثدي مرارا الخ. كل ما يخرج مم بدن الانسان مما يوجب خروجه الوضوء او الغسل فهو مغلظ كا الغايط و البول
المصنف ابن ابي شيبة: رقم 906
البحر الرايق: لان الثوب والبدن لا يطهران بالدلك الا في المني لان الثوب لتخلخله يتداخله كثير من اجزاء النجاسة فلا يخرجها الا الغسل
البدايع الصنايع: 1/236
الفتح القدير: 1/168
الفتاوى التاترخانية: 1/467
سنن ابي داؤد: رقم 4737
الصحيح البخاري: رقم 3371
الصحيح المسلم: رقم 2186
الصحيح البخاري: رقم 5351-54 قال رسول الله صلي: اذا انفق المسلم نفقة علي اهله و هو يحتسبها كانت له صدقة
الصحيح المسلم: رقم 2358
والله اعلم بالصواب
দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।