এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

এস পি সি পদ্ধতির ব্যবসা ইসলামী শরীয়তের আলোকে অবৈধ!

ফতওয়া কোডঃ 65-ব্যবা-10-1-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, মুফতি সাহেবের নিকট এ আমার একটি ফতওয়ার বিষয়ে আরজি রয়েছে, আমি মাসুমপুর উত্তরপাড়া নিবাসী আমাদের এলাকায় বর্তমানে একটি নতুন সংস্থা কাজ শুরু করেছে, কাজটি হল তারা এস পি সি কোম্পানির কাজ শুরু করেছে, যেই কোম্পানির সিস্টেম হল শুরুতে ১ হাজার বা বার শত টাকা দিয়ে আইডি খুলতে হবে এবং প্রত্যেকদিন কিছু ভিডিও আসবে সেই ভিডিও গুলো দেখতে হবে, এতে আমাকে প্রত্যেকদিন ১০ টাকা করে তারা দেবে, এখন আমার প্রশ্ন হল যে এই এস পি সি কোম্পানিতে কাজ করা জায়েজ আছে কিনা? থাকলে কিভাবে এবং না থাকলে কিভাবে? সেগুলো বিস্তারিত জানাবেন, এবং এটা যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে হারাম হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ সহকারে আমাকে দলিল ভিত্তিক ফতওয়া জানাবেন ইনশাআল্লাহ তাআলা।

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

এস পি সি কোম্পানিতে ব্যবসা সম্বন্ধে দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার প্রকাশিত একটি ফতওয়া নিচে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে, নিম্নক্ত ফতওয়ার সাথে রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ফাতওয়া বিভাগের মুফতি সাহেবগন একাত্বতা পোষন করছেন।

‘‘বরাবর, ফতোয়া বিভাগ মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, বিষয়: spc প্রসঙ্গে। জনাব মুফতীয়ানে কেরাম, বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা spc warld Express বহু স্তর থেকে আয় করার প্ল্যাটফর্ম। spc-এর এমডি সাহেবের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে অ্যাক্টিভ ইউজার আছে ৫০ লাখের বেশি। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মুসলমান এমনকি অনেক আলিমও এই ব্যবসায় জড়িত! spc-এর সুরত হলো, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস অ্যাপ ডাউনলোড করে একজন রেফার খুঁজে বের করে ১২ শত টাকা দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা। তারপর তাদের বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করা। সারকথা হলো, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে আয় করতে হলে ১২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তার মাধ্যমে যদি আরেকজন সদস্যা হয় তাহলে সে এর কমিশন পাবে। অধিকাংশ সময় চারশত টাকা কমিশন পেয়ে থাকে। দ্বিতীয়জন তৃতীয় আরেকজনকে এতে যুক্ত করলে প্রথম ব্যক্তিও এর কিছু কমিশন পেয়ে থাকে। এভাবে ওয়ান স্টার থেকে সেভেন স্টার হতে পারলে তাদের দেয়া অনেক সুবিধা ও লাভের পার্সেন্ট পাওয়া যায়। এসপিসির কার্যক্রমে নিজের টাকা উত্তোলন করতে হলে নিম্নে পাঁচশত টাকা একাউন্টে থাকতে হবে। এটা হলো সাধারণ একাউন্টধারীর জন্য। রয়েল একাউন্ট হলে সেক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট এর পণ্য ক্রয় করতে হবে। আমার জানার বিষয় হলো, এসপিসির কার্যক্রম কি শরীয়তসম্মত? এর সাথে জড়িত হয়ে ইনকাম করা কি বৈধ? জানিয়ে বাধিত করবেন।

শরয়ী সমাধানঃ প্রচলিত spc ward Express-এর কর্যক্রম, লেনদেন সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী ও অবৈধ। তাদের সাথে যুক্ত হওয়া নাজায়েয। এখান থেকে আয় করা অবৈধ। এই ধরনের ইনকাম থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্য অপরিহার্য। আর ইহাকে অবৈধ ঘোষণা করা আবশ্যক।এতে ঘুষ, ধোঁকা, প্রতারণা, আল আকলু বিল বাতিল তথা অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণ, বিনিময়হীন শ্রম, শ্রমহীন বিনিময়, অর্থাৎ আল আমলু বিলা উজরাহ, আল উজরাহ বিলা আমল, অন্যের মাল অবৈধভাবে আহরণ, রিবা, যুলূম নানাবিধ শরীয়ত পরিপন্থী বিষয় রয়েছে। নিম্নে এর বিশ্লেষণ দেয়া হল।

১. প্রশ্নে উল্লেখিত আছে যে, ১২০০ টাকা দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করে তারপর সে বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করতে পারবে। যদি ধরে নেয়া হয় তাদের বিজ্ঞাপন ক্লিক করে ইনকাম করা হয়, তাহলে ১২০০ টাকা কেন দিতে হয়? এতে বুঝা যায় যে, এটা মূল কাজের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান, যাকে রিশওয়াহ বা ঘুষ বলা হয়। যা হারাম ও অবৈধ।

২. প্রশ্নে উল্লেখিত আছে যে, প্রথম ব্যক্তি যদি একজন সদস্য বৃদ্ধি করে তাহলে সে চারশত টাকা বোনাস পাবে, দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি আরেকজনকে বানায় তাহলে প্রথম ব্যক্তি এর কিছু কমিশন পাবে। অর্থাৎ এসপিসির পদ্ধতিতে ডাউন লেভেল জেনারেশন থেকে আপ লেভেল জেনারেশনের যে কমিশন গুলো আসে সেগুলো বিনিময়হীন উপার্জন, যাকে আল আকলু বিল বাতিল তথা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ বলা হয়। কারণ ১ম স্তরের সরাসরি জেনারেশন ছাড়া ২য় ও ৩য় স্তরের জেনারেশন থেকে পরবর্তী স্তরগুলোতে যে সকল ব্যক্তি যুক্ত হয় তারা অন্যান্য লোকজন কর্তৃক এবং তাদের স্বাক্ষরে।সুতরাং যে পারিশ্রমিক নিম্ন স্তর থেকে আসছে তা বিনিময়হীন হওয়ার কারণে الأكل مال الغير بالباطل তথা অন্যের সম্পদ বাতিল পন্থায় আহরণ করার অন্তর্ভুক্ত যা অবৈধ।

৩. আলোচিত পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বহু স্তর থেকে আয় ও الإجر بلا عمل। কারণ এতে ডাউন লেভেলের যারা যুক্ত হচ্ছে, তারা অন্যের মাধ্যমে হচ্ছে, অথচ এখান থেকে অন্যের শ্রমের বিপরীতে কমিশন পাচ্ছে আপলেভেলের লোকজন। সুতরাং এটি নিষিদ্ধ শ্রমহীন বিনিময়, যা অবৈধ।

৪. উপরোক্ত পদ্ধতির দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাতে নিষিদ্ধ ‘গারার’ রয়েছে। কারণ এসপিসিতে যুক্ত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে রেফার করে আয় করা। অথচ এর পরিণতি সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। কেননা তার নিজের বানানো তিনজন লোক ছাড়া ডাউন লেভেলের পুরাটাই অন্যের কাজের উপর নির্ভরশীল, যা অনিশ্চিত। অন্যরা নেট সামনে অগ্রসর করলে তবেই সে কাঙ্ক্ষিত কমিশন পাবে, অন্যথায় নয়। কত টাকা কমিশন পাবে তাও অনিশ্চিত। অর্থাৎ অধিকাংশ জিনিসেই গারার রয়েছে।

৫. এসপিসির কর্যক্রমে টাকা উত্তোলন করতে হলে পণ্য ক্রয় করতে হবে। এটি একটি ফাসিদ শর্ত। কারণ, প্রাপ্ত আয় যদি হালালও ধরে নেয়া হয়, তাহলে সেটা এসপিসির নিকট গ্রাহকের পাওনা বা দায়। পাওনা আদায়ের জন্য তার পণ্য ক্রয় করতে হবে। তা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাছাড়া এটি জুলুমও বটে।

৬. এসপিসির নীতি অনুযায়ী ৫০০ টাকার কম হলে ক্যাশ করা যাবে না। এটা স্পষ্ট জুলুম ও প্রতারণা। তাছাড়া এটা বিনিময়হীন শ্রমের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ العمل بلا أجرة, যা নিষিদ্ধ।

সুত্রসমূহ

١- قوله تعالى ولا تاكلوا اموالكم بينكم بالباطل (سوره البقرة ١٨٨) وقد جاء فى تفسير المنار واما الباطل فهو مالم يكن في مقابلة شئ حقيقي تفسير المنار( ج٢ ص ١٥٩ م دارالكتب)قال رئيس المفسرين عبد الله ابن عباس في تفسيره ان ياكله بغير عوض(أحكام القرأن جصصاص ج ٢ ص ١٧٢)

٢- لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي(الصحيح للبخاري)وشرط(الجامع للترمذي)٧- لا يحل سلف وبيع ولا شرطان في بيع (الجامع للترمذي)

٣- نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع الحصاه وعن بيع الغرر (الصحيح للمسلم)

٤- عن ابي هريره رضي الله تعالى عنه قال قال الله تعالى انا خصمهم يوم القيامه….. ورجل استاجر اجيرا فا ستوفى منه ولم يعطه اجره (الصحيح للبخاري ح ٢٢٢٧)

٥- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من غشنا فليس منا( الصحيح للمسلم)

٦- نهى رسول الله صلى الله عليه عن بيع

সমাধানেঃ শফী কামরান, সত্যায়নেঃ মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামী দা. বা., মুফতী জসিমুদ্দীন দা. বা., মুফতী খলীল আহমদ কাসেমী দা. বা.’’

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top