ব্যবসা বানিজ্য

পেনশনের টাকা ব্যাংকে রেখে ইন্টারেস্ট খাওয়া হারাম, তাহলে রিটায়ার্ড ব্যক্তি এখন কি করবে?

ফতওয়া কোডঃ 195-সুই,ব্যবা-22-09-1444

প্রশ্নঃ

পেনশনের টাকা ইসলামি ব্যাংকে রেখে ইন্টারেস্ট খাওয়া হালাল নাকি হারাম? তাহলে এই ব্যক্তি রিটায়ার্ড করেছে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সে এখন কি করবে?এখন তো তার ব্যাবসা করার বয়স ও নেই। মুফতি সাহেবের নিকট দলিল সহ জানতে চাই।

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

উলামায়ে কিরামের তাহকীক মতে ইসলামী ব্যাংক শরয়ী ব্যবসানীতি পুরোপুরি অনুসরন করে না। তাই তাদের কাছে জমা রাখা টাকার লভ্যাংশ সুদ হিসেবেই ধর্তব্য হবে, যা সম্পূর্ণ হারাম। এখন তার নিজের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব না হলে অন্যের সাথে مشاركة (মুশারাকা) অথবা مضاربة (মুদারাবা) এর ভিত্তিতে ব্যবসা করতে পারে বা নিজে কোনো ব্যবসা আরম্ভ করে লোকের মাধ্যমে ও পরিচালনা করতে পারে।

১. “মুশরাকা” মূলত আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ শরীক বা অংশীদার হওয়া। কারবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিভাষায় মুশারাকা বলতে এমন এক যৌথ কারবারকে বুঝায়, যে কারবারে সকল অংশীদার যৌথ কারবারের লাভ লোকসানে শরীক থাকে। মুশারাকা বা অংশীদারি কারবার সুদভিত্তিক অর্থায়নের একটি আদর্শিক বিকল্প ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় সম্পদ উৎপাদন ও বণ্টন উভয়ের সাথে অংশীদারগণ জড়িত থাকে। আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় সুদই একমাত্র মাধ্যম যাকে সর্বপ্রকারের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ইসলামে যেহেতু সুদ হারাম, সেহেতু একে কোন ধরনের অর্থায়ন (Financing) এর জন্য ব্যবহার করা যায় না। এজন্য ইসলামী মূলনীতিভিত্তিক অর্থ-ব্যবস্থায় ‘মুশারাকা’ সময়ের দাবী পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

২. “মুদারাবা” অংশীদারিত্বের একটি বিশেষ পদ্ধতি। যে অংশীদারিত্বে এক শরীক অপরকে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রথম পক্ষ, তাকে বলা হয় “রাব্বুলমাল” বা “পুঁজি বিনিয়োগকারী” অপরদিকে ব্যবসার পরিচালনা (Management) এবং কাজের দায়িত্ব দ্বিতীয় পক্ষের উপর, যাকে বলা হয় “মুদারিব” বা “কারবারি”।

মুশারাকা এবং মুদারাবার মাঝে পার্থক্য নিম্ন-বর্ণিত দিকগুলোতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা যায়।

(১) মুশারাকায় পুঁজি উভয়পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু মুদারাবায় পুঁজি বিনিয়োগের দায়িত্ব শুধু রাব্বুল মালের উপর।

(২) মুশারাকায় সকল অংশীদারগণ ব্যবসার জন্য কাজ করতে পারে এবং ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় (Management) সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু মুদারাবায় রাব্বুলমাল ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহণের কোন অধিকার রাখেনা, বরং তা শুধুমাত্র মুদারিবই আঞ্জাম দিবে।

(৩) মুশারাকায় সকল অংশীদার স্বীয় পুঁজির পরিমাণ অনুপাতে লোকসানে অংশীদার হয়। কিন্তু মুদারাবায় যদি লোকসান হয়, তাহলে তা শুধুমাত্র রাব্বুলমালকেই বহন করতে হবে। কেননা, মুদারিবতো কোন মূলধনই বিনিয়োগ করে না। তার লোকসান শুধুমাত্র এতটুকু যে, শ্রম বিফলে গেল এবং কোন পারিশ্রমিক পেল না।

সুত্রসমূহ

سورة البقرة: 275 ٱلَّذِینَ یَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا یَقُومُونَ إِلَّا كَمَا یَقُومُ ٱلَّذِی یَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ ذَ ٰ⁠لِكَ بِأَنَّهُمۡ قَالُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡبَیۡعُ مِثۡلُ ٱلرِّبَوٰا۟ۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَیۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟ۚ …لله

مسند أحمد بن حنبل: رقم 3809 عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

معارف السنن: 1/34 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء

رد المحتار: 7/31

بذل المجهود: 1/37

اسلامي بنكاري كي بنيادي: مفتي تقي عثماني

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে যাকাতযোগ্য ব্যক্তি ঐচ্ছিক যাকাত গ্রহন করা কি বৈধ?

ফতওয়া কোডঃ 161-বিলে,ব্যবা-08-11-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম, মুহতারাম, একজন ক্রেতা আমার মাল কেনা দাম হতেও কমে নিতে চাচ্ছে, সাথে যেহেতু আমি যাকাতের মুস্তাহিক, তাই ক্রেতা আমাকে তার যাকাতও দিচ্ছে। এতে কোন পক্ষের জন্য শরীয়ত এর দিক থেকে কোন অসুবিধা আছে কিনা? কেমন যেন তার যাকাতের এমাওউন্ট এর কারনে আমার লসে বিক্রিও পোষায়ে যাচ্ছে।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এমন কোন শর্ত করলে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত সুরতে কেনা দাম থেকে কমে বিক্রির চুক্তির সাথে যদি যাকাত গ্রহণের শর্ত করা হয় তাহলে বিক্রয় ফাসিদ বলে গণ্য হবে। তবে যাকাত গ্রহণের শর্ত ব্যতীত কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করাতে কোন সমস্যা নেই।

সুত্রসমূহ

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار): 86/5 وفي الخلاصة: اشترى عبدا على أن يبيعه جاز، وعلى أن يبيعه من فلان لا يجوز؛ لأن له طالبا. ونقل في الفتح أيضا عبارة الخلاصة وأقرها. والظاهر أن وجهها كون بيع العبد ليس فيه نفع له، فإذا شرط بيعه من فلان صار فيه نفع لفلان وهو من أهل الاستحقاق فيفسد

البحر الرائق شرح كنز الدقائق: 99/16 وعلى أن يبيعه من فلان لا يجوز لأن له طالبا

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار): 4/591 وشرط بيع العبد إلا إذا قال: من فلان بأن قال: بعتك العبد على أن تبيعه من فلان فإنه يفسد؛ لأن له طالبا،” قره عين الأخيار لتكملة رد المحتار علي الدر المختار (8/ 183) “قلت: وبالقيل جزم في الخلاصة والبزازية وغيرهما، وكذا قاضيخان من باب ما يدخل في البيع تبعا من الفصل الاول، ومثله في الاشباه من العارية، لكن فيه أن الشرط إذا كان لا يقتضيه العقدلا يلائمه وفيه نفع لاحد المتعاقدين أو لآخر من أهل الاستحقاق ولم يتعارف بين الناس يفسد البيع

بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع: 3/12 لأن الشرط الذي يخالف مقتضى العقد مفسد في الأصل وشرط الرهن والكفالة مما يخالف مقتضى العقد؛ فكان مفسدا إلا أنا استحسنا الجواز

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار): 86/5 قال في البحر: كأن اشترى طعاما بشرط أكله أو ثوبا بشرط لبسه فإنه يجوز. اهـ تأمل (قوله ولو أجنبيا) تعميم لقوله لأحد، وبه صرح الزيلعي أيضا (قوله فلو شرط إلخ) تفريع على مفهوم التعميم المذكور، فإن مفهومه أنه لو كان فيه نفع لأجنبي يفسد البيع؛ كما لو كان لأحد المتعاقدين (قوله أو أن يقرضه) أي أن يقرض فلانا أحد العاقدين كذا، بأن شرط المشتري على البائع أن يقرض زيدا الأجنبي كذا من الدراهم أو شرط البائع على المشتري ذلك (قوله فالأظهر الفساد) وبه جزم في الفتح بقوله: وكذا إذا كانت المنفعة لغير العاقدين، ومنه إذا باع ساحة على أن يبني بهامسجدا أو طعاما على أن يتصدق به فهو فاسد. اهـ. ومفاده أنه لا يلزم أن يكون الأجنبي معينا، وتأمله مع ما قدمناه آنفا عن الخلاصة، إلا أن يجاب بأن المسجد والصدقة يراد بهما التقرب إلى الله تعالى وحده، وإن كانت المنفعة فيهما لعباده، فصار المشروط له معينا بهذا الاعتبار تأمل

ضوابط: 2/53 ہر وہ شرط جو مقتضاۓ عقد یا ملائم عقد ہو یا لوگوں میں متعارف وہ بیع میں جائز ہے ۔اور جوشرط ایسی نہ ہو اوراس میں بائع یا مشتری یا شیع کا نفع ہو تو وہ جائز نہیں، اس سے بیع فاسد ہو جائے گی۔

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

রাইস মিল মালিকের সাথে ধান-চাল ক্রয়-বিক্রয় সম্বন্ধে বিবিধ ফতওয়া

ফতওয়া কোডঃ 160-বিলে,ব্যবা-05-11-1443

প্রশ্নঃ

১ . কোন ব্যক্তি রাইস মিল মালিককে চাল ক্রয় বাবদ ৫০,০০০ হাজার টাকা দিল এই শর্তে যে এ মুহূর্তে সে চাল নিবে না, বরং বছরের যে কোনো সময় (তখন চালের দাম কমে যাক বা বেড়ে যাক) ঐ চালের তৎকালীন বাজারমূল্য মিল মালিক হতে গ্রহণ করবে।

২. কোন ব্যক্তি রাইস মিল মালিককে ১০০ বস্তা ধান দিল এবং শর্তারোপ করল, বছরের যে কোনো সময় ঐ ধানের চলমান বাজারমূল্য মিল মালিক হতে গ্রহণ করতে পারবে।

৩. মাল গোডাউনে রেখে শুধুমাত্র মেমো ক্রয়-বিক্রয় করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

১. এই ভাবে ক্ৰয় বিক্ৰয় জায়িয হবেনা, কারন এখানে ক্ৰয় বিক্ৰয়ের চুক্তির মাঝে এমন শর্ত আরোপ করেছে যা ক্ৰয় বিক্ৰয়ের চুক্তি বহিৰ্ভুত। আবার মেয়াদটাও অনিৰ্ধারিত, যা ঝগড়া ফাসাদের কারন হতে পারে। এ জন্য উক্ত ক্ৰয়-বিক্ৰয় শরিয়ত সম্মত নয়।

২. প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিক্ৰেতা রাইস মিল মালিকের কাছে ১০০ বস্তা ধান দিলো, তখন বিক্ৰয় চুক্তি সম্পাদন করে নাই। বরং ভবিষ্যতে এ বিক্ৰয় করার ওয়াদা করা হয়েছে যে, বছরের যেকোন সময় উক্ত ধানগুলোকে বাজার মুল্যে আপনার কাছে বিক্ৰি করে দিবে। সুতরাং তখন এটা بيع হিসাবে গন্য হয়নি। বরং এটা البيع بالوعدة হিসাবে গন্য হয়েছে। অত‌এব পরবৰ্তিতে যখন উভয়ে বাজার মুল্যে ক্ৰয়-বিক্ৰয় করবে তখন তা البيع بالتعاطي হিসাবে গন্ন হবে। আর এ ধরনের ক্ৰয় বিক্ৰয় জায়িয আছে।

৩. অস্থাবর স্থানান্তরযোগ্য পন্য হস্তগত না করে গোডাউনে শুধু পেপারস/মেমো ক্ৰয় বিক্ৰয় করা শরিয়ত সম্মত নয়। নবীয়ে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পন্য হস্থগত করার আগে বিক্ৰি করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন।

হযরত হাকিম ইবনে হিযাম রা. বলেনঃ আমি রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রসূল আমি পন্য ক্ৰয়-বিক্ৰয় করি এর কোন পন্থাটি হালাল আর কোনটা হারাম? রসুল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন তুমি কোন পন্য ক্ৰয় করবে তখন তা হস্তগত করার আগে অন্যত্ৰ বিক্ৰি করবেনা।

সুত্রসমূহ

سنن ابي داود و سنن الترمذي و سنن النساي و سنن ابن ماجه: قال رسول الله صلي.لا يحل سلف وبيع ولا شرطان في بيع

البحر الرائق: كتاب البيوع..باب بيع الفاسد….اشار المصنف.بالعتق وما عطف عليه الي كل شرط لا يقتضيه العقد ولا يلاءمه…وفيه منفعة لاحد المتعاقدين او للمعقود عليه

فتح القدير: كتاب البيوع, باب البيع الفاسد

بدائع الصنائع: كتاب البيوع, فصل في شرائط الصحة في البيوع

المبسوط للسرخسي: كتاب البيو ع, باب البيوع اذا كان فيها شرط

سورة البقرة: 257 احل الله البيع وحرم الربي

ابن ماجة: يا معشر التجار ان بيعكم هذا يحضره اللغو و الكذب فشوبوه بالصدقة

فتح القدير: كتاب البيوع..اما ركنه فالفعل المتعلق بالبدلين من المتاطبين او من يقوم. مقامهما الدال علي الرضا بتبادل الملك فيهما

البحر الرائق: كتاب البيوع, ان ركنه الايجاب والقبول الخ

الدر المختار: كتاب البيوع, و شرعا مبادلة شىء مرغوب فيه بمثله علي وجه مخصوص, اي بايجاب او تعاط

فتح القدير: كتاب البيوع, باب البيع الفاسد

سنن ابي داود و سنن الترمذي و سنن النساي: حديث حكيم بن حزام لا تبع شيءا حتي تقبضه

بدائع الصنائع: 5/181

شرح فتح القدير: 6/510

تبيين الحقائق: 4/79

المبسوط للسرخسي: 9/10-13

البحر الرائق: 6/126

الفقه الاسلامي و ادلته: 5/175

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

কোন ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেয়া যাবে? সকল ইসলামী ব্যাংক সমূহের লেনদেন শরীয়ত সম্মত কি?

ফতওয়া কোডঃ 148-ব্যাবা,সুই-28-07-1443

প্রশ্নঃ

১. কোন ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেয়া যাবে?

২. সকল ইসলামী ব্যাংক সমূহের লেনদেন শরীয়ত সম্মত কি?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

১. মূলত ইসলামী ব্যাংকগুলো সরাসরি টাকা লোন দেয়না, লোন শব্দকে তারা ইনভেস্টমেন্ট শব্দে রুপান্তর করেছে, অর্থাৎ তারা আপনাকে কিছু টাকা দিবে। সেই টাকার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসাকে দাড় করাতে পারবেন। আর এ ক্ষেত্ৰে খাতের ভিন্নতা, এলাকার ভিন্নতা হিসাবে ইনভেস্টমেন্ট এর পরিমানেও ভিন্নতা আসবে, তবে তারা ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে যে খাতেই টাকা দিক না কেন? রিটার্ন রেট আপনার জন্য প্ৰযোজ্য হবে, যেমন আপনি যদি বাড়ী তৈরী করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট নিতে চান তাহলে ১৬.০০% শতাংশ রিটার্ন রেট আপনার জন্য প্ৰযোজ্য হবে।

আপনি যদি ছোট খাটো একটি ব্যবসা করতে চান, এবং এই ব্যবসার জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট নিতে চান তাহলে আপনার জন্য ১২ পার্সেন্ট রিটার্ন রেট প্ৰযোজ্য হবে, এই হলো তাদের লোন দেওয়ার সিস্টেম।সুতরাং ব্যাংক আপনাকে লোন হিসাবে (পন্য কিনে না দিয়ে) নগদ টাকা যে নামেই প্রদান করুক না কেন, তার বিনিময়ে রিটার্ন রেট নেওয়া সুদ হিসাবে গন্য হবে এবং এ ধরনের লোন নেওয়া হারাম। হযরত ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেনঃ كل قرض جر منفعة فهو ربا অর্থঃ যেই ঋন কোন মুনাফা নিয়ে আসে তা সুদের প্ৰকার সমূহের একটি। হযরত ইমাম মালেক রহ. বর্ননা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন বস্তু ঋন দিবে সে যেন অতিরিক্ত কোনো কিছু শর্ত না করে, যদিও তা এক মূঠ ঘাস হোকনা কেন!

আর যদি ঋন (লোন) হিসাবে পন্য যেমন সিমেন্ট, রড বা ব্যবসায়ী সামগ্ৰী দেয়, তাহলে তা শর্তের ভিত্তিতে হলে জায়েয হবে, অন্যথায় জায়েয হবেনা। আর এই লোনটা তখন বায়ে মুরাবাহা হিসাবে ধরা হবে, সুতরাং বায়ে মুরাবাহার যে সমস্ত শর্ত আছে তা পরিপূর্ন ভাবে থাকতে হবে। শর্ত সমূহ থেকে কোন শর্ত না পাওয়া গেলে এই লোনও জায়েয হবেনা।

ইসলামী ব্যাংক সমূহ তাদের ভাষ্যমতে তারা নগদ টাকা গ্ৰাহককে প্ৰদান করেনা। তবে ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে নগদ টাকা দেয়, যার আলোচনা সামান্য পরিমান পূর্বে করা হয়েছে, তবে ইসলামী ব্যাংক সমূহের বিনিয়োগের কার্যক্ৰম সমূহ (এটা তাদের ভাষ্যমতে এবং কাগজ কলমে) সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা দরকার।

তাদের কার্যক্ৰম সমূহঃ ১. বায়ে মুরাবাহা, ২. বায়ে মুযারাবা, ৩. বায়ে মুয়াজ্জাল, ৪. বায়ে সলম, ৫. মুশারাকা, ৬. হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক, ৭. করজ। ইসলামী ব্যাংকগুলো জনগনের সাথে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে, এবং বলে যে তারা উক্ত‍‍‍ কারবার করতে গিয়ে ক্ৰয় বিক্ৰয় সমূহে শরীয়ত কর্তৃক যত শর্ত আছে সব শর্ত পুরন করে। কিন্ত অনুসন্ধান করলে বাস্তবে এর ভিন্নতা পাওয়া যায়।

ক. বায়ে মুযারাবা/মুদারাবা। মুযারাবা পদ্ধতি ইসলামী শরীয়তের এমন একটি আদর্শ বিনিয়োগ ব্যবস্থা, যা শরীয়তের স্বাতন্ত্ৰ, সাম্য এবং ইনসাফ ও ন্যায় এর রক্ষাকবচ। কিন্ত প্ৰচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলো এ পদ্ধতি পালনে আগ্ৰহী নয়। তাদের বক্ত‍‍‍ব্য হচ্ছে বর্তমানে মানুষের আমানত-দিয়ানতের অবস্থা অত্যান্ত নিম্নমুখী, তাদেরকে যদি বলা হয় আমরা লোকসান বহন করবো তবে সে ব্যবসায় লোকসান বৈ লাভ কখনো হবেনা, আর সে ক্ষেত্ৰে ব্যবসায়ীদের পাতানো লোকসানের বোঝা বহন করতেই ব্যাংকগুলোর অবস্থা খরাপ হয়ে যাবে। তাই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্ৰে মুযারাবা ব্যবসা করেনা।

খ. বায়ে মুরাবাহা। মুরাবাহা ইসলামী ফিকহের ক্ৰয় বিক্ৰয়ের একটি প্ৰকারের নাম, মুলত এটি কোন বিনিয়োগ পদ্ধতি নয়। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্ৰতিষ্ঠান সমূহের অধিকাংশ বিনিয়োগ মূরাবাহা নামেই হয়ে থাকে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, ফিকহের কিতাবে বর্নিত মুরাবাহা ও ব্যাংকগুলোতে প্ৰচলিত মুরাবাহার মাঝে পার্থক্য রয়েছে, ফিকহের কিতাবে বর্নিত মুরাবাহা হচ্ছে কোন ব্যক্তি তার কোন বস্ত ক্ৰয় মূল্যের অধিক দামে অন্যের নিকট বিক্ৰয় করা। এখানে পন্যটা আগের থেকেই বিক্ৰেতার মালিকানায় রয়েছে, এবং তা নগদ বা বাকি যে কোন মূল্যে বিক্ৰি হতে পারে। কিন্তু ব্যাংকের মুরাবাহায় বিক্ৰেতার (ব্যাংকের) নিকট আগে থেকে কোন পন্য থাকেনা বরং ক্ৰেতার (বিনিয়োগ গ্ৰহনকারীর) সাথে বিক্ৰয় চুক্তি সম্পাদনের পর ব্যাংক তা ক্ৰয় করে থাকে। অতপর অধিক মূল্যে বাকিতে/কিস্তিতে বিনিয়োগ গ্ৰহীতার নিকট বিক্ৰি করে থাকে। এ ক্ষেত্ৰে মূল্য আদায়ের সময় বিবেচনায় এনে পন্যের দাম কম বেশী করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবলম্বন করা উক্ত মুরাবাহা যদিও শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন আদর্শ বিনিয়োগ পদ্ধতি নয়, তথাপী শর্ত সমূহ যথাযথ পালন করলে তা জায়েযের পর্যায়ে এসে যায়।

বায়ে মুরাবাহার শর্তাবলী। মুরাবাহা জায়েয হ‌ওয়ার শর্তাবলি নিম্নরুপঃ

১. ব্যাংকের মালিকানায় ও দখলে আসার পুর্বে তা বিক্ৰি করতে পারবেনা।

২. কোন নাজায়েয, হারাম ক্ৰয়-বিক্ৰয় করা যাবেনা।

৩. ব্যাংক যে পন্য গ্ৰাহকের নিকট বিক্ৰয় করবে তা যদি এমন হয় যে, গ্ৰাহক নিজেই এর মালিক, এবং সে ব্যাংকের নিকট তা নগদে বা কম মুল্যে বিক্ৰয় করতে পরে, আবার যদি বাকীতে বেশী মূল্যে ক্ৰয় করে নিচ্ছে তবে কারবারটি হারাম হবে এবং সুদের অন্তর্ভূক্ত‍‍‍ হবে।

৪. বাস্তব ভিত্তিক ক্ৰয় বিক্ৰয় হতে কোন ধরনের হীলা বাহানা চলবেনা।

৫. কারবারটি এমন হতে হবে যাতে বাস্তবেই ক্ৰেতার (ক্লায়েন্টের) ঐ পন্যের জন্য অর্থায়ন দরকার। যদি এমন হয় যে, শুধু পন্যের নাম ব্যবহার করে নগদ টাকা বিনিয়োগ নিচ্ছে পন্য কেনার কোনো ইচ্ছা নেই, তাহলে কারবারটি হারাম হবে।

৬. ব্যাংকের নিকট বিনিয়োগ প্ৰার্থী (ক্লায়েন্ট) যদি এমন জিনিস খরিদের নামে টাকা নেয় যা আগেই সে খরিদ করে ফেলেছে অথবা তা কাজেও লাগিয়ে ফেলেছে এখন সে সব পন্যের বকেয়া মূল্য পরিশোধের জন্য অথবা টাকার অন্য কোন প্ৰয়োজন হ‌ওয়ায় ঐ পন্যের নামে ব্যাংকের সাথে মুরাবাহা করছে তবে তাও হবে হারাম ও সুদী লেনদেন, উল্লেখ্য‍‍‍ যে কখনো ৫ ও ৬ নং এর সমস্যা হয়ে থাকে, এ জন্য ব্যাংক কর্তৃক অনেক ক্ষেত্ৰেই নিজে পন্য খরিদ করতে যায়না, ও তা নিজ রিস্কেও নেয়না।

৭. মুরাবাহার একটি অপরিহার্য শর্ত হলোঃ পন্যটি কিছুক্ষনের জন্য হলেও ব্যাংকের দায়িত্বে ও রিস্কে যেতে হবে, সে সময়ের মধ্যে সেটি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা ব্যাংকের ক্ষতি বলেই ধর্তব্য হবে। যদি মুরাবাহার পন্য ক্লায়েন্ট (গ্ৰাহক) কে বিক্ৰির পুর্বে এমন কোনো ঝুকি (রিস্ক) ব্যাংক বহন না করে, তবে লেনদেন হারাম হবে।হযরত মাওলানা তকী উসমানী দা. বা. এবং অন্যান্য ফকীহগনের (যারা ব্যাংকের মুরাবাহারা অনুমোদন দিয়েছেন) মতে এটিই একমাত্ৰ শর্ত যা মুরাবাহাকে সুদী কারাবারা থেকে ভিন্ন করে দেয়। কারন সুদী লোনের মধ্যে ব্যাংক ক্লায়েন্টকে টাকা দেওয়ার পর তার কোনো রিস্ক সে বহন করেনা, এখন যদি মুরাবাহাতেও এমনটি ঘটে এবং গ্ৰাহক তথা ক্লায়েন্টকে পন্য হস্তান্তরের পুর্বে ব্যাংক তার ঝুকি বা রিস্ক গ্ৰহন না করে, তবে কারবারটি হবে সুদী লেনদেনের নামান্তর।

৮. মুরাবাহার আরেকটি শর্ত হলোঃ ক্লায়েন্টের নিকট নির্ধারিত মূল্যে পন্য বিক্ৰি করে দেওয়ায় তার আর মূল্য বৃদ্ধি করা যাবেনা, অর্থাৎ সনাতনী ব্যাংকগুলো যেমন বছরান্তে বা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সূদের হাড় বাড়িয়ে দেয়। সেভাবে মুরাবাহা পন্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবেনা, করলে তা সুদ হবে।

এ দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে বিনিয়োগের সমপর্ক রয়েছে অথবা তাদের কারবার সম্পর্কে অবগত আছেন এমন যে সকল পাঠক মুরাবাহার উপরের শর্ত এখানে পড়লেন তারা হয়তো অবাক হয়ে লক্ষ করবেন যে এগুলোর অনেকাংশ‌ই ব্যাংক বা আর্থিক প্ৰতিষ্ঠানগুলো পালন করেনা। ক্লায়েন্ট ও অভিজ্ঞ মহল ব্যাংকের মুরাবাহা বলতে বুঝেন কাংখিত টাকার জন্য সে পরিমান মুল্যের মেমো ক্লায়েন্ট কর্তৃক ব্যাংকে হাজির করা, এবং কাগজ পত্ৰের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্লায়েন্টকে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্ৰদান করা, অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তাগন‌ই স্বীকার করে থাকেন যে তারা গ্ৰাহক কর্তৃক প্ৰদর্শিত মেমোর মাধ্যমেই ব্যাংকের খরিদদার হ‌ওয়া এবং তা হস্তগত করার দায়িত্ব সমপন্ন করেন। ব্যাংক বা তার প্ৰতিনিধি কর্তৃক প্ৰথমে পন্য ক্ৰয় করে তা হস্তগত করে নিজ রিস্কে নিয়ে অতপর গ্ৰাহককে বিক্ৰি করা এতো কিছুর প্ৰয়োজনীয়তা তারা অনুভব করেননা। কোনো কোনো ব্যাংক অবশ্য গ্ৰাহক থেকে যে সকল কাগজ পত্ৰে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে তার মধ্যে একটি ওকালত সমপর্কিত নিয়োগ পত্ৰ‌ও থাকে অর্থাৎ ব্যাংক গ্ৰাহককে তার পক্ষ থেকে মালামাল ক্ৰয়ের জন্য প্ৰতিনিধি নিয়োগ করে থাকে, অনেক ক্ষেত্ৰেই ঘটনা এ পর্যন্ত‌ই শেষ হয়ে যায়, এরপরই পন্য বিক্ৰয়ের কাগজে স্বাক্ষর রেখে কাংখিত টাকার চেক দিয়ে গ্ৰাহককে ছেড়ে দেওয়া হয়, অথচ ঐ নিয়োগের দ্বারা সে প্ৰতিনিধির দায়িত্ব পেলো মাত্ৰ, এরপর লোকটি যদি সৎ হয় এবং বাস্তবেই ঐ টাকা দ্বারা পন্যটি খরিদ করে তবে ঐ পন্যের মালিক তো হলো ব্যাংক। এখন ব্যাংক তার কাছে বিক্ৰির পুর্বে এটিতো তার পন্য হলোনা, সে ব্যাংকের প্ৰতিনিধি হিসাবে নিজের কাছে তো বিক্ৰয় করতে পারেনা। এ তো গেলো ভালো গ্ৰাহকের কথা যে টাকা দ্বারা পন্য ক্ৰয় করেছে, কিন্তু ব্যাংকের উদাসীনতার সুযোগে অনেক গ্ৰাহক এমন‌ও থাকে যারা বাস্তবে পন্য ক্ৰয়ের কাছেও যায়না বরং কাংখিত টাকা হস্তগত করে তা ইচ্ছামত খরচ করে। আবার কেউ কেউ ঐ টাকা দ্বারা পূর্বে খরিদকৃত পন্নের মূল্য পরিশোধ করে থাকে যা ব্যাংকে যাওয়ার আগেই সে নিজের জন্য খরিদ করেছিলো।

ইসলামী ধারার ব্যাংকিং এর কয়েকটি দিক, ১. মুদারাবা কেনসেপ্ট বা মুনাফার অংশীদারী, ২. মুরাবাহা বিক্ৰি (লোনেৱ ক্ষেত্ৰে) মুশারাকা বা লাভ লোকসানের ভাগাভাগি। আর এই লাভ লোকসানের ভাগাভাগির ক্ষেত্ৰে ইসলামি ধারা মানা হয়না বলে মনে করেন অনেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নূরুল আমীন বলেছিলেনঃ ইসলামী ধারার ব্যাংকে লাভ বা ক্ষতির উপর মুনাফার অংশ হেরফের হতে পারে, আগে থেকে কোন কিছু নির্দিষ্ট থাকবেনা। কিন্তু আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো আগে থেকেই রেট জানা যায়, যে আমানতকারী কত শতাংশ মুনাফা পাবে! লাভ্যাংশ এর রেট আগের থেকেই নির্ধারিত। এখানে এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, লেনদেনে সুদ থেকে বাচা যেমন জরুরী, তেমনি অন্যান্য নাজায়েয ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাও কর্তব্য, কোন কারবার বাতিল নয় বরং তা ফাসিদ, অথবা পূরো সুদী নয় বরং আংশিক সুদী, শুধু এ কারনে তা জায়েয হয়না। এই হলো বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অভ্যান্তরীন অবস্থা।

২. ইসলামী ব্যাংক সমূহে একাউন্ট খোলার হুকুম। ১. কেউ কেউ বলেন যে, ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্ৰম নিয়ে যে সব দাবী করে থাকেন তা যদি সঠিক হয় তাহলে সেখানে একাউন্ট খোলা জায়েয আছে (যদিও বাস্তবে তারা ইসলামী আইন মানেনা)। ২. আবার কেউ কেউ বলেন যে, বাংলাদেশে কোন ব্যাংক‌ই সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামীক আইন মেনে ব্যাংকিং করছেনা। তাই একান্ত প্ৰয়োজন ছাড়া ব্যাংকে টাকা না রাখা ভালো।

তবে একান্ত প্ৰয়োজন হলে কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়েয। ডিপোজিট বা এ জাতীয় দীর্ঘ মেয়াদী কোন একাউন্ট খোলা জায়েয হবেনা।

عبد الله بن مسعود عن ابيه عن النبي صلي الله عليه وسلم قال لعن الله اكل الربا و موكله وشاهديه وكاتبه

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাস‌উদ রা. এর পিতা থেকে বর্নিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, সুদের সাক্ষী যে দেয়, সুদের দলিল যে লিখে, তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেছেন।

তবে যেহেতু বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকী ব্যাংকগুলো ব্যাপক ভাবে সুদী কারবার করে থাকে, শরয়ী বিধানের কোন তোয়াক্কাই করেনা, সেই হিসাবে ইসলামী ব্যাংকগুলো শরয়ী বিধান পালনের কিছুটা হলেও চেষ্টা করে থাকে, যদিও পুর্নাঙ্গ আইন তারাও অনুসরন করেনা বলেই আমরা জানি। কিন্তু “মন্দের চেয়ে ভালো অবশ্য‌ই” বলে একটা কথা আছে, তাই অন্য ব্যাংকে একাউন্ট খোলার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা নিরাপদ বলেই ধারনা করা হয়, বাকি আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। আর যদি কারেন্ট একাউন্ট খোলা সম্ভব না হয় (কারেন্ট একাউন্ট নাকি শুধু ব্যাবসায়ীদের জন্য, সাধারন লোকের জন্য না), তবে বাধ্য হলে ডিপোজিট ও দীর্ঘ মেয়াদী একাউন্ট খোলাও জায়েয হবে।

ডিপোজিট ছাড়াও শুধু সেভিং একাউন্ট খোলা যায়, যেখানে টাকা রাখলে কোন লাভ্যাংশ দেয়না, বরং উল্টা তারা আরো চার্জ কেটে নেয়। ডিপোজিট শাখায় না রেখে এই শাখায় টাকা জমা রাখবে, ডিপোজিট শাখায় রাখতে পারবেনা। তবে তার মুনাফাটিও সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

فمن اضطر غير باغ ولا عاد فلا اثم عليه .ان الله غفور رحيم

অর্থঃ অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফারমানী ও সীমালংঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা মহান ক্ষমাশীল এবং অত্যান্ত দয়ালু।

সুতরাং আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন তাহলে আপনাকে এই বিষয়ের প্ৰতি খেয়াল রাখতে হবে, ক. আপনার আসল কত টাকা জমা হচ্ছে সেটা জেনে রাখবেন, দরকার পরলে কোথাও লিখে রাখবেন, আপনি যদি ব্যাংকে টাকা জমা হ‌ওয়ার সাথে সাথেই আপনার টাকা উত্তোলন করেন তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই, এ ক্ষেত্ৰে আপনি শুধু আপনার মূল টাকাটাই পাবেন। খ. আর যদি আপনি পরবর্তিতে তা উত্তোলন করেন তাহলে আপনি দেখবেন যে, আপনাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে? তা থেকে আপনার মূল টাকা বাদ দিলে কত টাকা থাকে? অর্থাৎ আপনি আগে আপনার মুনাফার সংখ্যা বের করবেন। যদি আপনি নিজে সেটা সম্পর্কে অবগত হতে না পারেন তাহলে ব্যাংকে যার কাছ থেকে টাকা তুলবেন তার সহায়তা নিতে পারেন, তিনিই আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন, আপনি যদি মূল টাকা হিসেব করে রাখেন তাহলে এটাই উত্তম হবে। আপনার মূল টাকা বাদ দিয়ে যত টাকা থাকে সেটা আপনি গরিব মিসকিনদের মাঝে সাওয়াবের নিয়ত ছাড়াই দান করে দিবেন, সতর্কতা মূলক এই পদ্ধতি অবলম্বন করাই সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি।

সুত্রসমূহ

سورة البقرة: 275 وأحل الله البيع وحرم الربا

سنن بيهاقي: 5/350

مواطاء مالك: رقم 2513

سورة البقرة: 173 فمن اضطر غير باغ ولا عاد فلا اثم عليه ان الله غفور رحيم

مسند احمد: رقم 3809 عبد الله بن مسعود عن ابيه عن النبي (صلي) قال لعن الله اكل الربا و موكله وشاهديه وكاتبه

مسند ابو يعلي: رقم 4981

فقه البيوع: 1/1061-1063

جواهر الفقه: 2/453

فقهي مقالات: 3/39

বুহুসুন ফী কাযায়া ফিকহিয়য়াহ মুআছিরাহঃ ১/৩৫০-৩৬১

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

ব্যবসায়ীক ঋণ উসুল-লেনদেনে হুমকি-ধমকি বা মারধর করা শরীয়ত সম্মত?

ফতওয়া কোডঃ 142-ব্যাবা-03-07-1443

প্রশ্নঃ

কোন এক ব্যাক্তির নিকট আমার টাকা পাওনা আছে। ব্যাবসায়ীক লেনদেন হিসেবে পাওনা টাকা। আমার কাছে চুক্তিপত্র আছে এবং প্রমান হিসেবে তার দেওয়া চেক আছে। নির্দিষ্ট মেয়াদ পার হয়ে আরও কয়েক বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। কিন্ত আমার পাওনা টাকা সে দিচ্ছে না। আদালতে মামলা করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন এবং ঘুষ লেনদেন করতে হয় যা আমি করতে চাই না। আমার এখন শরীয়ত মুতাবিক কি করনীয়?
১. আমি কি তাকে হুমকি-ধমকি দিতে পারি?
২. তাকে তুলে এনে টাকা না দেয়া পর্যন্ত বেঁধে রাখতে পারি?
৩. তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে হালকা মারমুখি আচরন করতে পারি?
৪. তাকে মারধর করতে পারি?

ইসলামিক আইন কতটুকো সমর্থন করে? বিস্তারিত জানাবেন, জাযাকুমুল্লাহ।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

শরয়ী দৃষ্টিতে সময় মতো ঋণ আদায় করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ঋণ আদায় না করলে যুলুম হিসাবে গণ্য হয়৷ আর সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করলে পাওনাদার অনেক সময় কটুকথাও বলে। ইসলামের শিক্ষা হলোঃ পাওনা টাকার জন্য তাগাদা করার সময় ঋণদাতা যেন সহজ ও কোমল আচরণ করে, কোনো কটুবাক্য ব্যবহার না করে। কিন্তু কোন কারনে যদি সে কটুকথা বলে বা অসুন্দর আচরণ করে, তাহলে ঝণ গ্রহীতা তার সঙ্গে বাদানুবাদে কিংবা ঝগড়া-তর্কে জড়িয়ে না পড়া।

কেননা বুখারী শরিফে আছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে হজরত রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু ঋণ নিয়েছিলেন। সে এসে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতে লাগল। তা দেখে সাহাবায়ে কিরাম রা. তাকে মারতে উদ্যত হচ্ছিলেন। কিন্তু হজরত রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের একটু কথা বলার অধিকার রয়েছে। তবে মারধর করা হুমকী দেয়া বা অত্যাচার ইত্যাদি করা জায়েয নয়৷ কেননা শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের আবশ্যক হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য যথাযথ কৌশল গ্রহণ করা৷

মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অত্যাধিক। আর সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। এবং তা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধাণ বা তার পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তি বা আদালতের মাধ্যমে অথবা আদালত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘ দ্বারা সম্পন্ন হওয়া জরুরী। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারিক কার্য সম্পাদনের এখতিয়ার রাখে না। এতে জুলুম ও বিশৃঙ্খলাসহ অরাজকতার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। সুতরাং আপনাকে ঋণগ্রহীতা টাকা পরিশোধ না করলেও আপনার উচিত কোমল আচারণ করা৷ কঠোর কথা-বার্তা বলা জায়েয হলেও অনুচিত৷ আর মারধর ইত্যাদি করা জায়েয নেই৷

সুত্রসমূহ

الصحيح البخاري: رقم 2400 حدثنا مسدد، حدثنا عبد الأعلى، عن معمر، عن همام بن منبه، أخي وهب بن منبه أنه سمع أبا هريرة ـ رضى الله عنه ـ يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ‏مطل الغني ظلم‏

الصحيح المسلم: 1/69 قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من رأى منكم منكرا فليغير بيده فإن لم يستطع فبلسانه فإن كم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان

المبسوط: 8/34 والاستجار علي المعصية لا يجوز

بدايع الصنائع: 9/226 اما الذي يعم الحدود كلها فهو الامامة

الفتاوي الهندية: 2/167 والتعزير الذي يجب حقا للعبد بالقذف ونحوه فانه لتوقفه علي الدعوي لا يقيمه الا الحاكم الا ان يحكما فيه

فتاوي محمودیة: 18/553

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

ইন্টারনেট সংযোগ এর ব্যাবসা করা জায়েয!

ফতওয়া কোডঃ 108-ব্যবা-26-04-1443

প্রশ্নঃ

ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ব্যাবসা করা কি জায়েজ? দলিল সহ জানতে চাই!

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

ব্রডব্যান্ড/ওয়াইফাই/ইন্টারনেট এর ব্যবসার ক্ষেত্রে শরীয়তের মূলনীতি হলো এটি দ্বারা হারাম ও হালাল উভয় কাজ করারই সুযোগ রয়েছে, তাই শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী তা কাউকে প্রদান করা, বিক্রি করা বা এর ব্যাবসা করা সবই জায়েজ। সেই হিসেবে যেহেতু ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ভাল-মন্দ উভয় কাজই করা যাচ্ছে। তাই এর ব্যবসা জায়েজ আছে।

যদি ক্রেতা ক্রয়কৃত ইন্টারনেট দিয়ে কোন গুনাহের কাজ করে, তাহলে এর জন্য দায়ী হবে গুনাহকারী ব্যক্তি।তবে যদি এটি নিশ্চিত ভাবে জানা যায় যে, ক্রেতা ক্রয়কৃত ইন্টারনেট দিয়ে শুধু গুনাহের কাজই করবে, কোন প্রকার ভাল কাজ করবে না, তাহলে তার কাছে বিক্রয় করা জায়েজ হবে না।

তাকওয়ার দাবি হলোঃ ব্যপক ভাবে কোন গুনাহের আসবাব আমলে না আনা, কিছু নিয়ম ও শর্ত-শারাইত জুরিয়ে দেয়া যেনো সকলেই গুনাহ থেকে বাচতে পারে।

সুত্রসমূহ

سورة مائدة: 2 وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

سورة البقره: 29 أن كل ما فيه منفعة تحل شرعاً، فإن بيعه يجوز، لأن الأعيان خلقت لمنفعة الإنسان بدليل قوله تعالى: خلق لكم ما في الأرض جميعاً

الفقه الاسلامى وادلته، معالم النظام الاقتصادى فى الاسلام، القسم الثالث العقود، المبحث الرابع-البيع الباطل والبيع الفاسد، المطلب الاول-انواع البيع الباطل، بيع النجس والمتنجس: 4/217

الفتاوى الهندية: 3/116 وَمَا كَانَ الْغَالِبُ عَلَيْهِ الْحَرَامُ وَلَمْ يَجُزْ بَيْعُهُ وَلَا هِبَتُهُ

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

বায়নার টাকা ফেরত না দেয়ার শর্ত করা অবৈধ!

ফতওয়া কোডঃ 89-ব্যবা-13-02-1443

প্রশ্নঃ আমি এক কোটি টাকা দামের একটি প্লট কেনার জন্য প্লটের মালিকের সাথে বায়না চুক্তি করি, ৬ লক্ষ টাকা নগদ দিয়ে ২ মাসের সময় চাই, বাকি টাকা দুই মাসের মধ্যে দিয়ে দেবো, কিন্তু যে কোনো কারণে আমি আর দুই মাসের মধ্যে বাকি টাকা দিতে পারিনি, চুক্তিতে অবশ্যই উল্লেখ ছিল যে, দুই মাসের মধ্যে যদি টাকা দিতে না পারি তাহলে তিনি আমার ছয় লক্ষ টাকা আর ফেরত দেবেন না, এখন দুই মাস পার হয়ে প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, তিনি আমাকে জানিয়েছেন কিন্তু আমি টাকা পরিশোধ করতে পারিনি, এখন আমি জানতে চাই এই ৬ লক্ষ টাকা আমি ফেরত পেতে পারি কিনা, প্লটের মালিক বলছে চুক্তি অনুযায়ী আপনি ফেরত পাবেন না, এখন ইসলামী শরীয়ত এই চুক্তি ও বায়নার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত দেয়?

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

বায়নার টাকা ফেরত না দেয়ার শর্তে চুক্তিভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় শরীয়ত সম্মত নয়, এ ধরনের চুক্তি হয়ে গেলে চুক্তি বাতিল করা জরুরি, বায়নার টাকা যেহেতু পণ্য ক্রয়ের অর্থেরই অংশ তাই যেকোনো কারণে ক্রেতা যদি পণ্য ক্রয় না করে, বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি টাকা না দিতে পারে, তাহলে তার টাকা তাকে ফেরত দিতেই হবে। টাকা ফেরত না দিয়ে ভোগ করা শরীয়ত সম্মত নয়। দুই মাস পরে যখন ক্রেতা টাকা দিতে পারছিলেন না, বা আরেকটু দেরী করতে বলছিলেন, তখন আগের চুক্তি ভঙ্গ করে নতুনভাবে শরীয়ত সম্মত চুক্তি করা বুদ্ধিমানের কাজ ছিল।

সুত্রঃ আদ্দুররুল মুখতারঃ ৫/৮৪-৮৫, ৫/৯০-৯১, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ ৪/১৭০, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাতঃ ৯/৪২৮-৪২৯

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

এস পি সি পদ্ধতির ব্যবসা ইসলামী শরীয়তের আলোকে অবৈধ!

ফতওয়া কোডঃ 65-ব্যবা-10-1-1443

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, মুফতি সাহেবের নিকট এ আমার একটি ফতওয়ার বিষয়ে আরজি রয়েছে, আমি মাসুমপুর উত্তরপাড়া নিবাসী আমাদের এলাকায় বর্তমানে একটি নতুন সংস্থা কাজ শুরু করেছে, কাজটি হল তারা এস পি সি কোম্পানির কাজ শুরু করেছে, যেই কোম্পানির সিস্টেম হল শুরুতে ১ হাজার বা বার শত টাকা দিয়ে আইডি খুলতে হবে এবং প্রত্যেকদিন কিছু ভিডিও আসবে সেই ভিডিও গুলো দেখতে হবে, এতে আমাকে প্রত্যেকদিন ১০ টাকা করে তারা দেবে, এখন আমার প্রশ্ন হল যে এই এস পি সি কোম্পানিতে কাজ করা জায়েজ আছে কিনা? থাকলে কিভাবে এবং না থাকলে কিভাবে? সেগুলো বিস্তারিত জানাবেন, এবং এটা যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে হারাম হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ সহকারে আমাকে দলিল ভিত্তিক ফতওয়া জানাবেন ইনশাআল্লাহ তাআলা।

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

এস পি সি কোম্পানিতে ব্যবসা সম্বন্ধে দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার প্রকাশিত একটি ফতওয়া নিচে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে, নিম্নক্ত ফতওয়ার সাথে রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ফাতওয়া বিভাগের মুফতি সাহেবগন একাত্বতা পোষন করছেন।

‘‘বরাবর, ফতোয়া বিভাগ মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, বিষয়: spc প্রসঙ্গে। জনাব মুফতীয়ানে কেরাম, বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা spc warld Express বহু স্তর থেকে আয় করার প্ল্যাটফর্ম। spc-এর এমডি সাহেবের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে অ্যাক্টিভ ইউজার আছে ৫০ লাখের বেশি। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মুসলমান এমনকি অনেক আলিমও এই ব্যবসায় জড়িত! spc-এর সুরত হলো, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস অ্যাপ ডাউনলোড করে একজন রেফার খুঁজে বের করে ১২ শত টাকা দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা। তারপর তাদের বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করা। সারকথা হলো, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে আয় করতে হলে ১২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তার মাধ্যমে যদি আরেকজন সদস্যা হয় তাহলে সে এর কমিশন পাবে। অধিকাংশ সময় চারশত টাকা কমিশন পেয়ে থাকে। দ্বিতীয়জন তৃতীয় আরেকজনকে এতে যুক্ত করলে প্রথম ব্যক্তিও এর কিছু কমিশন পেয়ে থাকে। এভাবে ওয়ান স্টার থেকে সেভেন স্টার হতে পারলে তাদের দেয়া অনেক সুবিধা ও লাভের পার্সেন্ট পাওয়া যায়। এসপিসির কার্যক্রমে নিজের টাকা উত্তোলন করতে হলে নিম্নে পাঁচশত টাকা একাউন্টে থাকতে হবে। এটা হলো সাধারণ একাউন্টধারীর জন্য। রয়েল একাউন্ট হলে সেক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট এর পণ্য ক্রয় করতে হবে। আমার জানার বিষয় হলো, এসপিসির কার্যক্রম কি শরীয়তসম্মত? এর সাথে জড়িত হয়ে ইনকাম করা কি বৈধ? জানিয়ে বাধিত করবেন।

শরয়ী সমাধানঃ প্রচলিত spc ward Express-এর কর্যক্রম, লেনদেন সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী ও অবৈধ। তাদের সাথে যুক্ত হওয়া নাজায়েয। এখান থেকে আয় করা অবৈধ। এই ধরনের ইনকাম থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্য অপরিহার্য। আর ইহাকে অবৈধ ঘোষণা করা আবশ্যক।এতে ঘুষ, ধোঁকা, প্রতারণা, আল আকলু বিল বাতিল তথা অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণ, বিনিময়হীন শ্রম, শ্রমহীন বিনিময়, অর্থাৎ আল আমলু বিলা উজরাহ, আল উজরাহ বিলা আমল, অন্যের মাল অবৈধভাবে আহরণ, রিবা, যুলূম নানাবিধ শরীয়ত পরিপন্থী বিষয় রয়েছে। নিম্নে এর বিশ্লেষণ দেয়া হল।

১. প্রশ্নে উল্লেখিত আছে যে, ১২০০ টাকা দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করে তারপর সে বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করতে পারবে। যদি ধরে নেয়া হয় তাদের বিজ্ঞাপন ক্লিক করে ইনকাম করা হয়, তাহলে ১২০০ টাকা কেন দিতে হয়? এতে বুঝা যায় যে, এটা মূল কাজের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান, যাকে রিশওয়াহ বা ঘুষ বলা হয়। যা হারাম ও অবৈধ।

২. প্রশ্নে উল্লেখিত আছে যে, প্রথম ব্যক্তি যদি একজন সদস্য বৃদ্ধি করে তাহলে সে চারশত টাকা বোনাস পাবে, দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি আরেকজনকে বানায় তাহলে প্রথম ব্যক্তি এর কিছু কমিশন পাবে। অর্থাৎ এসপিসির পদ্ধতিতে ডাউন লেভেল জেনারেশন থেকে আপ লেভেল জেনারেশনের যে কমিশন গুলো আসে সেগুলো বিনিময়হীন উপার্জন, যাকে আল আকলু বিল বাতিল তথা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ বলা হয়। কারণ ১ম স্তরের সরাসরি জেনারেশন ছাড়া ২য় ও ৩য় স্তরের জেনারেশন থেকে পরবর্তী স্তরগুলোতে যে সকল ব্যক্তি যুক্ত হয় তারা অন্যান্য লোকজন কর্তৃক এবং তাদের স্বাক্ষরে।সুতরাং যে পারিশ্রমিক নিম্ন স্তর থেকে আসছে তা বিনিময়হীন হওয়ার কারণে الأكل مال الغير بالباطل তথা অন্যের সম্পদ বাতিল পন্থায় আহরণ করার অন্তর্ভুক্ত যা অবৈধ।

৩. আলোচিত পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বহু স্তর থেকে আয় ও الإجر بلا عمل। কারণ এতে ডাউন লেভেলের যারা যুক্ত হচ্ছে, তারা অন্যের মাধ্যমে হচ্ছে, অথচ এখান থেকে অন্যের শ্রমের বিপরীতে কমিশন পাচ্ছে আপলেভেলের লোকজন। সুতরাং এটি নিষিদ্ধ শ্রমহীন বিনিময়, যা অবৈধ।

৪. উপরোক্ত পদ্ধতির দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাতে নিষিদ্ধ ‘গারার’ রয়েছে। কারণ এসপিসিতে যুক্ত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে রেফার করে আয় করা। অথচ এর পরিণতি সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। কেননা তার নিজের বানানো তিনজন লোক ছাড়া ডাউন লেভেলের পুরাটাই অন্যের কাজের উপর নির্ভরশীল, যা অনিশ্চিত। অন্যরা নেট সামনে অগ্রসর করলে তবেই সে কাঙ্ক্ষিত কমিশন পাবে, অন্যথায় নয়। কত টাকা কমিশন পাবে তাও অনিশ্চিত। অর্থাৎ অধিকাংশ জিনিসেই গারার রয়েছে।

৫. এসপিসির কর্যক্রমে টাকা উত্তোলন করতে হলে পণ্য ক্রয় করতে হবে। এটি একটি ফাসিদ শর্ত। কারণ, প্রাপ্ত আয় যদি হালালও ধরে নেয়া হয়, তাহলে সেটা এসপিসির নিকট গ্রাহকের পাওনা বা দায়। পাওনা আদায়ের জন্য তার পণ্য ক্রয় করতে হবে। তা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাছাড়া এটি জুলুমও বটে।

৬. এসপিসির নীতি অনুযায়ী ৫০০ টাকার কম হলে ক্যাশ করা যাবে না। এটা স্পষ্ট জুলুম ও প্রতারণা। তাছাড়া এটা বিনিময়হীন শ্রমের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ العمل بلا أجرة, যা নিষিদ্ধ।

দলীলসমূহঃ

١- قوله تعالى ولا تاكلوا اموالكم بينكم بالباطل (سوره البقرة ١٨٨) وقد جاء فى تفسير المنار واما الباطل فهو مالم يكن في مقابلة شئ حقيقي تفسير المنار( ج٢ ص ١٥٩ م دارالكتب)قال رئيس المفسرين عبد الله ابن عباس في تفسيره ان ياكله بغير عوض(أحكام القرأن جصصاص ج ٢ ص ١٧٢)

٢- لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي(الصحيح للبخاري)وشرط(الجامع للترمذي)٧- لا يحل سلف وبيع ولا شرطان في بيع (الجامع للترمذي)

٣- نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع الحصاه وعن بيع الغرر (الصحيح للمسلم)

٤- عن ابي هريره رضي الله تعالى عنه قال قال الله تعالى انا خصمهم يوم القيامه….. ورجل استاجر اجيرا فا ستوفى منه ولم يعطه اجره (الصحيح للبخاري ح ٢٢٢٧)

٥- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من غشنا فليس منا( الصحيح للمسلم)

٦- نهى رسول الله صلى الله عليه عن بيع

সমাধানেঃ শফী কামরান, সত্যায়নেঃ মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামী দা. বা., মুফতী জসিমুদ্দীন দা. বা., মুফতী খলীল আহমদ কাসেমী দা. বা.’’

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

মানুষের কিডনি বিক্রি করার বিধান

ফতওয়া কোডঃ 61-যকু-28-11-1442

প্রশ্নঃ মানুষের কিডনি বিক্রি করার বৈধতা আছে কি?

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

শরয়ী দৃষ্টিতে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ নাই। সুতরাং মানুষের কিডনি, চক্ষু ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ হবে না।

সুত্রঃ ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ ২৭/৩১২, ফতওয়ায়ে রহিমিয়াঃ ১০/১৬৯

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

ব্যবসার জন্য ফেসবুকে ছবি ব্যবহার করা কেমন?

ফতওয়া কোডঃ 09-অ,ব্যাবা,হাহা-09-08-1442

প্রশ্নঃ

আমি ব্যবসার জন্য ফেসবুক ব্যাবহার করি, কিন্তু আমার ফেসবুক প্রোফাইলে কোন ছবি নাই, যার কারণে আমাকে কেউ চিনতে পারে না, আমার প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবসার জন্য ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করতে পারব কিনা?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

শরিয়তের দৃষ্টিতে ছবি উঠা না জায়েয ও হারাম। কেবলমাত্র একান্ত অপারগতার ক্ষেত্রে ছবি উঠার অবকাশ আছে। ফেসবুকে ব্যাবসা যেহেতু একান্তই অপারগতা নয়, তাই ফেসবুকে ব্যাবসার উদ্দেশ্যে ছবি উঠা ও তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কারণ ব্যাবসার লক্ষ্য-কোটি সহিহ পথ ও পদ্ধতি রয়েছে। আপনি এই না জায়েয পন্থা পরিহার করে বিকল্প অন্য কোনো পন্থা বা ব্যাবসা গ্রহণ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত ফেসবুকে ছবি না দিয়ে আপনার ব্যাবসার মুনাসিব কোনো লোগো/মনোগ্রাম তৈরি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বা আহবাবদেরকে ম্যাসেজ কিংবা ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অবগত করে সেই লোগো/মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। এত সহজ বিকল্প পথ থাকতে ছবি উঠা ও ব্যবহার করা জায়েয হবে না।

সুত্রসমূহ

صحیح البخاری: 5954-5956

صحیح المسلم: 2/200

فتح الباری: 10/401-404

رد المحتار: 1/647

فتاوی محمودیة: 19/470

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading