এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

কোম্পানী পক্ষ থেকে ডাক্টারদেরকে দেয়া উপহার ডাক্টার গ্রহন করতে পারবে কি?

ফতওয়া কোডঃ 141-বিলে,হাহা-03-07-1443

প্রশ্নঃ

কোম্পানী ডাক্টারদেরকে নিজ প্রতিষ্ঠানের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখার শর্তে বিভিন্ন গিফ্ট (টাকা, বিভিন্ন পন্য) প্রদান করে থাকে, জানার বিষয় হলোঃ উক্ত গিফ্ট ডাক্টার গ্রহন করতে পারবে কি না? তা ব্যবহার করতে পারবে কি না?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

আমাদের দেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাক্তারদেরকে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী যে নানা রকম উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকেন, যেমন কাউকে নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন আবার কাউকে বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, ঔষধ কোম্পানী ডাক্তারদের যা দেয় তা তিন ধরনের।

১. অনেক সময় ডাক্তারদেরকে ঔষধ কোম্পানী তাদের প্ৰোডাক্ট এর পরিচিতির জন্য কোন ছোট এবং কম দামী উপহার ইত্যাদি দিয়ে থাকেন যেমনঃ কলম, রাইটিং প্যাড, ডায়েরী, মগ, ইত্যাদি; এটা এক ধরনের হাদিয়া।

২. ডাক্তারদের অনেক সময় অনেক মূল্যবান, দামী কিছু দেওয়া হয় অথবা অঘোষিত চুক্তির ভিত্তিতে টাকা-পয়সা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি দেওয়া হয়, তাদের মাঝে যদিও কোন লিখিত চুক্তি থাকেনা, কিন্তু এসব মূল্যবান উপহার, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য ভালো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পেছনে বিশেষ কারন থাকে যে, তিনি ঐ কোম্পানীর ঔষধ প্ৰেসক্ৰাইব করবেন।

৩. অনেক সময় ডাক্তারদের চুক্তির আওতায় আসতে হয়, অর্থাৎ আপনি আমাদের প্ৰোডাক্টগুলোই শুধু মাত্ৰ প্ৰেসক্ৰাইব করবেন বা বেশী পরিমানে প্ৰেসক্ৰাইব করবেন অথবা এ পরিমান প্ৰেসক্ৰাইব করবেন। তার বিনিময়ে আপনাকে এটা দেওয়া হবে, বা চুক্তি অনুযায়ী কমিশন (টাকা) দেওয়া হবে।

উল্লেখিত তিন অবস্থার মধ্যে প্রথম অবস্থায় অর্থাত ছোট খাটো কোন উপহার যেমন কলম, রাইটিং প্যাড, ডায়েরী, এ ধরনের সামান্য ছোট উপহার গ্ৰহন করতে কোন অসুবিধা নেই, কারন এ উপহারের মাধ্যমে চিকিৎসকের উপর কোনরুপ চাপ সৃষ্টি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা এ উপহারগুলো ডাক্তারদের ছাড়াও অন্যদেরকেও দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থায় নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরামগনের গবেষনা অনুযায়ী এটি গ্ৰহন করা কোন চিকিৎসকের জন্য কোন ভাবেই জায়েয নেই। কেননা এটা এক প্রকার ঘুষ। সুতরাং তা গ্ৰহন করা এবং ব্যাবহার করা উভয়টাই নাজায়েয ও হারাম।

এক হাদিসে আছে যে, রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ব্যাক্তিকে পাঠালেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারের (বাইতুল মালের) পক্ষ থেকে যাকাত উসুল করার জন্য, তিনি যাকাত এবং সাদকা উসুল করে নিয়ে আসার পরে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি দাতার পক্ষ থেকে যে যাকাত বা সাদকা উসুল করে নিয়ে এসেছি এর মধ্যে দাতা এই পরিমান সম্পদ দিয়েছেন বাইতুল মাল তথা রাষ্ট্ৰীয় কোষাগারের জন্য, আর এটা আমাকে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন, রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই লোকটির আচারন দেখে উপস্থিত লোকদেরকে জমায়েত করে আল্লাহ তাআলার প্ৰশংসা করে সংক্ষিপ্ত এক ভাষন দিলেন, পুরো পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি বললেনঃ তোমাদের কাওকে যখন কোন দায়িত্ত্ব পালন করতে দেওয়া হয় তখন অন্য পক্ষের পক্ষ থেকে তিনি যে উপহার নিচ্ছেন, তিনি যদি এই দায়িত্ত্বে নিয়োজিত না থাকতেন তাহলে কি তাকে এই উপহার দেয়া হতো? বা তিনি যদি নিজ বাড়ীতে বসে থাকতেন তাহলে কি তাকে কেউেএই উপহার দিত? এই হাদীসে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ধরনের উপহার নেওয়াকে নাজায়েয ও হারাম আখ্যয়িত করেছেন।

সুতরাং একজন চিকিৎসক নির্দিষ্ট ফি (সরকারি/বেসরকারি বেতন) এর বিনিময়ে রোগীকে সময় দিচ্ছেন, তাই এ ক্ষেত্রে ডাক্টার সাহেবের জন্য কোন কোম্পানী বা অন্য কারো পক্ষ থেকে হাদিয়া নেওয়া, তথাকথিত উপঢৌকন নেওয়া বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করা শরীয়ত সম্মত নয়, এবং তা ব্যাবহার করাও জায়েয নাই।

সুত্রসমূহ

المصباح المنير: الرشوة ما يعطيه الشخص للحاكم او غيره ليحكم له اويحمله علي ما يريد

سنن الترمذي: 3/614 عن عبد الله بن عمرو رض…قال لعن رسول الله صلي الله عليه وسلم الراشي والمرتسي

مسند احمد: رقم 6778

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top