এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

ব্যবসায়ীক ঋণ উসুল-লেনদেনে হুমকি-ধমকি বা মারধর করা শরীয়ত সম্মত?

ফতওয়া কোডঃ 142-ব্যাবা-03-07-1443

প্রশ্নঃ

কোন এক ব্যাক্তির নিকট আমার টাকা পাওনা আছে। ব্যাবসায়ীক লেনদেন হিসেবে পাওনা টাকা। আমার কাছে চুক্তিপত্র আছে এবং প্রমান হিসেবে তার দেওয়া চেক আছে। নির্দিষ্ট মেয়াদ পার হয়ে আরও কয়েক বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। কিন্ত আমার পাওনা টাকা সে দিচ্ছে না। আদালতে মামলা করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন এবং ঘুষ লেনদেন করতে হয় যা আমি করতে চাই না। আমার এখন শরীয়ত মুতাবিক কি করনীয়?
১. আমি কি তাকে হুমকি-ধমকি দিতে পারি?
২. তাকে তুলে এনে টাকা না দেয়া পর্যন্ত বেঁধে রাখতে পারি?
৩. তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে হালকা মারমুখি আচরন করতে পারি?
৪. তাকে মারধর করতে পারি?

ইসলামিক আইন কতটুকো সমর্থন করে? বিস্তারিত জানাবেন, জাযাকুমুল্লাহ।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

শরয়ী দৃষ্টিতে সময় মতো ঋণ আদায় করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ঋণ আদায় না করলে যুলুম হিসাবে গণ্য হয়৷ আর সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করলে পাওনাদার অনেক সময় কটুকথাও বলে। ইসলামের শিক্ষা হলোঃ পাওনা টাকার জন্য তাগাদা করার সময় ঋণদাতা যেন সহজ ও কোমল আচরণ করে, কোনো কটুবাক্য ব্যবহার না করে। কিন্তু কোন কারনে যদি সে কটুকথা বলে বা অসুন্দর আচরণ করে, তাহলে ঝণ গ্রহীতা তার সঙ্গে বাদানুবাদে কিংবা ঝগড়া-তর্কে জড়িয়ে না পড়া।

কেননা বুখারী শরিফে আছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে হজরত রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু ঋণ নিয়েছিলেন। সে এসে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতে লাগল। তা দেখে সাহাবায়ে কিরাম রা. তাকে মারতে উদ্যত হচ্ছিলেন। কিন্তু হজরত রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের একটু কথা বলার অধিকার রয়েছে। তবে মারধর করা হুমকী দেয়া বা অত্যাচার ইত্যাদি করা জায়েয নয়৷ কেননা শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের আবশ্যক হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য যথাযথ কৌশল গ্রহণ করা৷

মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অত্যাধিক। আর সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। এবং তা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধাণ বা তার পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তি বা আদালতের মাধ্যমে অথবা আদালত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘ দ্বারা সম্পন্ন হওয়া জরুরী। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারিক কার্য সম্পাদনের এখতিয়ার রাখে না। এতে জুলুম ও বিশৃঙ্খলাসহ অরাজকতার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। সুতরাং আপনাকে ঋণগ্রহীতা টাকা পরিশোধ না করলেও আপনার উচিত কোমল আচারণ করা৷ কঠোর কথা-বার্তা বলা জায়েয হলেও অনুচিত৷ আর মারধর ইত্যাদি করা জায়েয নেই৷

সুত্রসমূহ

الصحيح البخاري: رقم 2400 حدثنا مسدد، حدثنا عبد الأعلى، عن معمر، عن همام بن منبه، أخي وهب بن منبه أنه سمع أبا هريرة ـ رضى الله عنه ـ يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ‏مطل الغني ظلم‏

الصحيح المسلم: 1/69 قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من رأى منكم منكرا فليغير بيده فإن لم يستطع فبلسانه فإن كم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان

المبسوط: 8/34 والاستجار علي المعصية لا يجوز

بدايع الصنائع: 9/226 اما الذي يعم الحدود كلها فهو الامامة

الفتاوي الهندية: 2/167 والتعزير الذي يجب حقا للعبد بالقذف ونحوه فانه لتوقفه علي الدعوي لا يقيمه الا الحاكم الا ان يحكما فيه

فتاوي محمودیة: 18/553

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top