ফতওয়া কোডঃ 14-তাখু,নামা,বি-14-08-1442
প্রশ্নঃ
১. আমার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন কে ২০১৬ ইং নভেম্বর মাসে আব্দুল আউয়ালের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং থেকে আমার মেয়ের জামাই নিখোজ হয়। আমার বিয়াইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে বিয়াই বলে যে, তাদের সাথে ছেলের কোন যোগাযোগ নেই, তারা আশংক্ষা করছে তাদের ছেলেকে পাওনাদাররা মেরে ফেলছে ,তাই তারা আমার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে বলছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের কি হুকুম, তা জানালে উপকৃত হব।
২. মোসাঃ সুরাইয়া ইয়াসমিন পিতাঃ মোঃ রুহুল আমীন আমার স্বামী আব্দুল আউয়াল (শাওন) গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং নিখোজ হয়। আমার শশুর শাশুড়ী আমার পিতাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, আপনার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিন। একাকী ছবর করা আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের মাসআলা কি? ফায়ছালা জানালে উপকৃত হব।
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী নিখোজ হওয়ার পর স্ত্রী কতদিন অপেক্ষা করবে এই ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে ৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তবে এই মাসআলায় হানাফী মাযহাবের উলামায়ে মুতাআখরীন ইমাম মালেক রহঃ এর মাযহাবের উপর ফতোয়া দিয়েছেন। এর বিস্তারিত বিবরণ হলোঃ স্বামী নিখোজ হওয়ার পর সংবাদটি মুসলিম কাযীর নিকট গিয়ে স্ত্রী পেশ করবে। এবং তার সাধ্যনুযায়ী নিখোজ স্বামীকে তালাশ করার পর যদি না পায়,তাহলে কাযী স্ত্রীকে চার বছর অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিবে। যদি এর মধ্যে ফিরে এসে যায় তাহলে ভালো। আর যদি ফিরে না আসে তাহলে কাযী তার স্বামীর মৃত্যুর হুকুম দিবে। কেননা, হযরত ওমর ফারুক রাঃ বলেন, নিখোঁজ স্বামী জন্য স্ত্রী চার বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। হযরত ওমর, ওছমান, আলী এবং অনেক তাবেয়ী থেকেও অনুরূপ ফতওয়া রয়েছে । অতপর স্ত্রী ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে।
স্ত্রী দ্বিতীয় জায়গায় বিবাহ করার পর যদি হঠাৎ প্রথম স্বামী ফিরে আসে, তাহলে উক্ত মহিলা দ্বিতীয় স্বামীর নিকট থাকা জায়েয হবেনা। কেননা প্রথম স্বামী ফিরে আসার কারণে দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। অতপর ২য় বিবাহ বাতিল হবার কারণে ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পালন করার পর উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর স্ত্রী হবে। উল্লেখ্য যে,ইদ্দতের নিয়ম হচ্ছে- স্ত্রী গর্ভবতী না হলে মৃত বা নিখোজ স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশদিন ইদ্দত/ শোক পালন করবে। আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত পালনের অর্থ হল, স্বামী-স্ত্রী যে ঘরে বসবাস করত, উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ঐ ঘরেই তাকে অবস্থান করতে হবে। চিকিৎসা বা জীবিকার প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়। সুতরাং ইদ্দত অবস্থায় কোথাও বেড়াতে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া বা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া নাজায়েয ও হারাম।
তাছাড়া ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম সাজ-সজ্জা গ্রহণ করাও নিষেধ। কাজেই ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত অলংকার পরা, হাতে মেহেদী লাগানো, আতর বা খুশবু লাগানো, সাজগোজের কাপড় পরা, চিকন দাঁতের চিরুনী দ্বারা চুল আঁচড়ানো বা এ ধরনের যত সাজ-সজ্জা মহিলারা করে থাকে তা সবই নিষেধ। এ অবস্থায় একদম সাদাসিধা থাকা জরুরী। এমনকি পান খাওয়ায় অভ্যস্ত থাকলে তা খেয়ে ঠোট লাল করা যাবে না।
সূত্রসমূহ
سورة البقرة: 234
اللباب في شرح الكتاب: 5-6
سنن البيهقي: رقم 15345-15348
المهلة: 9/316-324
مصنف عبد الرزاق: رفم 12325
احسن الفتاوى: 5/467
فتاوى محمودية: 16/342
رد المحتار: 4/295-296
شرح المنهاج على مختصر الخليل: 2/375
شرح الصغير: 2/694
حاشية الدسوقي: 2/479
منار السبيل: 2/88
الدر المختار: 3/510-511-531
الهداية: 2/423, 3/427
والله اعلم بالصواب
দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।