নারীদের মাসাইল

সৎ মায়ের ভাই/বোন, সৎ বাবার বোন/ভাইয়ের সাথে ও দেবরের ছেলের সাথে পর্দা করতে হবে কি?

ফতওয়া কোডঃ 147-নামা-26-07-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, আমার প্রশ্ন হলোঃ

১. সৎ মায়ের ভাই/বোনের সাথে পর্দা করতে হবে কি? তেমনিই সৎ বাবার বোন/ভাইয়ের সাথে পর্দা করতে হবে কি?

২. দেবরের ছেলের সাথে পর্দা করতে হবে কি? হাদিসে আছে, চাচা বাবার সমান। এক্ষেত্রে কি চাচী মায়ের সমান হয় কি?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

শরীয়তের বিধান হলো সৎ মা, যিনি বাবার স্ত্রী হওয়ার কারণে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার সামনে যাওয়া যাবে, পর্দা করতে হবেনা। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

وَلَا تَنكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۚ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا

১. খালাঃ আপন খালা, সৎ খালা, বৈপিত্রেয় খালা, দুধ খালা অর্থাৎ দুধ মা’র আপন বোন, সৎ বোন, বৈপিত্রেয় বোন এবং দুধ বোন মাহরাম। এমনিভাবে আপন মাতা-পিতার খালা, দাদা-দাদির খালা ও নানা-নানির খালাও মাহরামভুক্ত।

২. ফুফুঃ আপন ফুফু, সৎ ফুফু, বৈপিত্রেয় ফুফু ও দুধ ফুফু মাহরাম। এমনি নিজের মাতা-পিতার ফুফু, দাদা-দাদির ফুফু ও নানা-নানির ফুফু এভাবে যত উপরে যাক সকলেই মাহরাম।

৩. চাচাঃ আপন চাচা, সৎ চাচা, বৈপিত্রেয় চাচা ও দুধ চাচা অর্থাৎ আপন পিতার দুধ ভাই, দুধ পিতার আপন ভাই, সৎ ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই ও দুধ ভাই মাহরাম। এমনিভাবে পিতা, দাদা ও নানার চাচারাও মাহরাম।

৪. মামাঃ আপন মামা, সৎ মামা, বৈপিত্রেয় মামা ও দুধ মামা অর্থাৎ আপন মা’র দুধ ভাই, দুধ মা’র আপন ভাই, সৎ ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই ও দুধ ভাই মাহরাম। এমনিভাবে মা, দাদি ও নানির মামারাও মাহরাম। তবে আপন ফুফা ও খালুও মাহরাম নয়। চাচী গায়রে মাহরাম বিধায় তার সাথে দেখা করা জায়েয নেই।

সুত্রসমূহ

سورة النساء: 22-24

سورة النور: 31

فتاوي الشامي: 4/99-108, 402-410

فتاوي عالمغيري: 1/273-277

بدائع الصنائع: 3/396-400

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

নিফাস অবস্থায় স্বামী অধৈর্য হয়ে গেলে কী করবে? স্ত্রী দুধ পেটে চলে গেলে কি করবে?

ফতওয়া কোডঃ 94-নামা-20-03-1443

প্রশ্নঃ ১. নিফাস অবস্থায় স্বামী যৌন চাহিদার কারনে নিজেকে ঠিক রাখতে না পারলে কী করবে?

২. স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় কাটাতে স্ত্রীর দুধ পেটে চলে গেলে কি করবে?

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

১. এ অবস্থায় শুধুমাত্র স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ছাড়া বাকি শরীরের মাধ্যমে যৌন চাহিদা মিটানো জায়েয।

২. স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় কাটাতে স্ত্রীর স্তনের দুধ মুখে চলে গেলে ফেলে দিতে হবে। গিলে ফেলা মাকরূহে তাহরিমী। অবশ্য গিলে ফেললেও দুধ পানের হুরমতের হুকুম আসবে না।

সুত্রঃ সুরা বাকারাহঃ ২৩৩, আদদুররুল মুখতারঃ ৪/৩৯৭, রদ্দুল মুহতারঃ ১/৩৮৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ১/৩৯, আল বাহরুর রাইকঃ ১/১৯৮, আউযাজুল মাসালিকঃ ১/৩২৬

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

নারীদের সাজ-সজ্জা করার জন্য নাক-কান ছিদ্র করা শরীয়ত সম্মত!

ফতওয়া কোডঃ 29-নামা,পোপ-28-10-1442

প্রশ্নঃ

সমাজ এর প্রচলন আছে, নারীদের নাক-কান ছিদ্র করে বিভিন্ন অলংকার লাগানো হয়, সাধারণত ধারালো ছুরি দিয়ে ফোটা করা হয়, এতে প্রকাশ্যে তাদের ওপর জুলুম করা হয় বলে মনে হয়, শরীয়ত এ ব্যাপারে কি বলে?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

নারীদের সাজ-সজ্জা করার জন্য নাক-কান ছিদ্র করা হারাম নয় বরং শরীয়ত সম্মত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় কান ছিদ্র করা হতো, এ কাজ থেকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো নিষেধ করেননি, উলামায়ে কেরাম এই কান ছিদ্র করার উপর ইজতেহাদ করে নাক ছিদ্র করাকেও জায়েজ বলেছেন।

সুত্রসমূহ

فتاوى محمودية: 19/371

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

বিনা প্রয়োজনে ভ্রু প্লাক করা শরীয়ত সম্মত নয়!

ফতওয়া কোডঃ 26-নামা,বিপ্র-25-10-1442

প্রশ্নঃ

গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে ভ্রু প্লাক করার শরীয়ত সম্মত বিধান কি?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রচলিত ফ্যাশন অনুযায়ী ভ্রু প্লাক করা শরীয়ত সম্মত নয়, তবে ভ্রু বড় হয়ে গেলে বা এলোমলো হলে স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কাটার অনুমতি আছে, বিনা প্রয়োজনে ভ্রু প্লাক করা জায়েজ নেই।

সুত্রসমূহ

صحيح البخاري: 5939‎‎

رد المحتار: 6/373

فتاوى فقيه الملت: 12/41

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

স্বামী নিখোজ হলে করনীয়

ফতওয়া কোডঃ 14-তাখু,নামা,বি-14-08-1442

প্রশ্নঃ

১. আমার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন কে ২০১৬ ইং নভেম্বর মাসে আব্দুল আউয়ালের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং থেকে আমার মেয়ের জামাই নিখোজ হয়। আমার বিয়াইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে বিয়াই বলে যে, তাদের সাথে ছেলের কোন যোগাযোগ নেই, তারা আশংক্ষা করছে তাদের ছেলেকে পাওনাদাররা মেরে ফেলছে ,তাই তারা আমার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে বলছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের কি হুকুম, তা জানালে উপকৃত হব।

২. মোসাঃ সুরাইয়া ইয়াসমিন পিতাঃ মোঃ রুহুল আমীন আমার স্বামী আব্দুল আউয়াল (শাওন) গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং নিখোজ হয়। আমার শশুর শাশুড়ী আমার পিতাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, আপনার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিন। একাকী ছবর করা আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের মাসআলা কি? ফায়ছালা জানালে উপকৃত হব।

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

স্বামী নিখোজ হওয়ার পর স্ত্রী কতদিন অপেক্ষা করবে এই ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে ৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তবে এই মাসআলায় হানাফী মাযহাবের উলামায়ে মুতাআখরীন ইমাম মালেক রহঃ এর মাযহাবের উপর ফতোয়া দিয়েছেন। এর বিস্তারিত বিবরণ হলোঃ স্বামী নিখোজ হওয়ার পর সংবাদটি মুসলিম কাযীর নিকট গিয়ে স্ত্রী পেশ করবে। এবং তার সাধ্যনুযায়ী নিখোজ স্বামীকে তালাশ করার পর যদি না পায়,তাহলে কাযী স্ত্রীকে চার বছর অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিবে। যদি এর মধ্যে ফিরে এসে যায় তাহলে ভালো। আর যদি ফিরে না আসে তাহলে কাযী তার স্বামীর মৃত্যুর হুকুম দিবে। কেননা, হযরত ওমর ফারুক রাঃ বলেন, নিখোঁজ স্বামী জন্য স্ত্রী চার বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। হযরত ওমর, ওছমান, আলী এবং অনেক তাবেয়ী থেকেও অনুরূপ ফতওয়া রয়েছে । অতপর স্ত্রী ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে। স্ত্রী দ্বিতীয় জায়গায় বিবাহ করার পর যদি হঠাৎ প্রথম স্বামী ফিরে আসে, তাহলে উক্ত মহিলা দ্বিতীয় স্বামীর নিকট থাকা জায়েয হবেনা। কেননা প্রথম স্বামী ফিরে আসার কারণে দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। অতপর ২য় বিবাহ বাতিল হবার কারণে ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পালন করার পর উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর স্ত্রী হবে। উল্লেখ্য যে,ইদ্দতের নিয়ম হচ্ছে- স্ত্রী গর্ভবতী না হলে মৃত বা নিখোজ স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশদিন ইদ্দত/ শোক পালন করবে। আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত পালনের অর্থ হল, স্বামী-স্ত্রী যে ঘরে বসবাস করত, উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ঐ ঘরেই তাকে অবস্থান করতে হবে। চিকিৎসা বা জীবিকার প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়। সুতরাং ইদ্দত অবস্থায় কোথাও বেড়াতে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া বা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া নাজায়েয ও হারাম। তাছাড়া ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম সাজ-সজ্জা গ্রহণ করাও নিষেধ। কাজেই ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত অলংকার পরা, হাতে মেহেদী লাগানো, আতর বা খুশবু লাগানো, সাজগোজের কাপড় পরা, চিকন দাঁতের চিরুনী দ্বারা চুল আঁচড়ানো বা এ ধরনের যত সাজ-সজ্জা মহিলারা করে থাকে তা সবই নিষেধ। এ অবস্থায় একদম সাদাসিধা থাকা জরুরী। এমনকি পান খাওয়ায় অভ্যস্ত থাকলে তা খেয়ে ঠোট লাল করা যাবে না।

সূত্রসমূহ

سورة البقرة: 234

اللباب في شرح الكتاب: 5-6

سنن البيهقي: رقم 15345-15348

المهلة: 9/316-324

مصنف عبد الرزاق: رفم 12325

احسن الفتاوى: 5/467

فتاوى محمودية: 16/342

رد المحتار: 4/295-296

شرح المنهاج على مختصر الخليل: 2/375

شرح الصغير: 2/694

حاشية الدسوقي: 2/479

منار السبيل: 2/88

الدر المختار: 3/510-511-531

الهداية: 2/423, 3/427

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading