বিবাহ

তিন তালাকের পর দ্বিতীয় বিবাহে সহবাস না করলে হালালা বৈধ হবে?

ফতওয়া কোডঃ 187-তাখু,বি-05-09-1444

প্রশ্নঃ

হুজুর আমার একটা প্রশ্ন, এক ভাই তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে এবং তালাকের পাঁচ মাস পর ঐ স্ত্রীকে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে অন্য এক ছেলের সাথে বিয়ে পড়াইছে। বিয়ে পড়ানোর ২০ মিনিট পর সেই ছেলেটি তাঁকে তিন তালাক দিয়েছে তার সাথে সহবাস বা মেলামেশা হয়নি। এর পর আবার নতুন করে তিন মাস দশ দিন ঐ মেয়েটি ইদ্দত পালন করে আগের স্বামীর সাথে বিয়ে পড়ানো হয়েছে এবং সংসার করছে। এখন জানার বিষয় হলো, এটা জায়েজ হবে কিনা এবং তারা স্বামী-স্ত্রী কি এর কারণে কিয়ামতের দিন যেনার কাতারে দাঁড়াবে কি না?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

যদি কোনো কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আর কোন সম্পর্ক বাকি থাকে না, তালাক দেয়ার সাথে সাথেই উভয়েই আলাদা হয়ে যাওয়া জরুরী। তবে যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরেও উক্ত স্ত্রীকে নিতে চায় তাহলে শরীয়ত সম্মত হালালা করা যেতে পারে।

শরীয়ত সম্মত হালালা হলঃ প্রথম স্বামীর তালাক পতিত হওয়ার পর তালাকের ইদ্দত পালন করতে হবে, ইদ্দত পালন শেষ হলে যদি তালাকপ্রাপ্তা নারীর অন্য কোথাও বিবাহ হয় (শুধু নামে বিবাহ নয় বরং সহবাস জরুরী) এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যে কোন কারণে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, যেমন হয়তো দ্বিতীয় স্বামী ইন্তেকাল করেছেন, অথবা যে কোন কারনে দ্বিতীয় স্বামীও উক্ত নারীকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছেন, এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্বামীর তালাক দেওয়ার পর উক্ত তালাকের ইদ্দত পালন করার পর চাইলে প্রথম স্বামী উক্ত নারীকে বিবাহ করতে পারে।

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম স্বামী তিন তালাক দেওয়ার পর অন্য আরেকজনের কাছে নামমাত্র বিবাহ (দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস ছাড়া) পড়িয়ে দ্বিতীয় স্বামী ২০ মিনিট পর যে তালাক দিয়েছে, এটার কারণে উক্ত নারীর উপর তিন তালাক পতিত হয়েছে ঠিক কিন্তু সহবাস না করার কারণে প্রথম স্বামীর জন্য দ্বিতীয় স্বামীর তালাকের ইদ্দতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রথম স্বামীর বিবাহ করা বৈধ হয়নি। কেননা এখানে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস না কারর কারনে শরীয়ত সম্মতভাবে হালালা হয়নি। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যদি তারা এখনো একসঙ্গে জীবন যাপন করছে, এটা তাদের জন্য সম্পুর্ন হারাম ও জেনার শামিল এবং যত দ্রুত সম্ভব বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া জরুরি, এবং সত্য দিলে তওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাওয়া জরুরি।

সুত্রসমূহ

سورۃ البقرۃ: 230 فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ

فتاوی ہندیۃ: 1/473 وَإِنْ كَانَ الطَّلَاقُ ثَلَاثًا فِي الْحُرَّةِ وَثِنْتَيْنِ فِي الْأَمَةِ لَمْ تَحِلَّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ نِكَاحًا صَحِيحًا وَيَدْخُلَ بِهَا ثُمَّ يُطَلِّقَهَا أَوْ يَمُوتَ عَنْهَا، كَذَا فِي الْهِدَايَةِ”

الصحیح لمسلم: 533 عن عائشة قالت جاءت امرأة رفاعة إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت  كنت عند رفاعة فطلقني فبت طلاقي فتزوجت عبد الرحمن بن الزبير وان ما معه مثل هدبة الثوب فتبسم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال أتريدين أن ترجعي إلى رفاعة ؟لا حتى تذوقي عسيلته ويذوق عسيلتك

الھدایۃ: 2/409 ان كان الطلاق ثلاثا في الحرة او ثنتين في الامة لم تحل له حتی تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها او يموت عنها

و الله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

অভিভাবক ছাড়াও বিবাহ শুদ্ধ হয়!

ফতওয়া কোডঃ 171-বি-26-01-1444

প্রশ্নঃ

যদি বিয়ের জন্য ছেলের ফ্যামিলি রাজি থাকে, কিন্তু মেয়ের ফ্যামিলি রাজি না থাকে, তবে বিয়ের জন্য যদি ছেলে মেয়ে উভয় জনই রাজি থাকে এবং মেয়ের ফ্যামিলির যদি বাবা মা বা বড় ভাই কেহ রাজী যদি না থাকে, তারা যদি উভয় জনই নিজেরা নিজেরা বিয়ে করে নেয় তাহলে কি বিয়েটা হালাল হবে?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক বুঝদার সাক্ষীর সামনে প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র ও পাত্রি যদি প্রস্তাব দেয় এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক। অভিভাবক জানুক বা না জানুক। তবে যদি কুফু ছাড়া বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রকে বিবাহ করে, যার কারণে মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে পিতা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারবে। যদি কুফুতে বিবাহ করে, তাহলে পিতা এ অধিকারও পাবে না।

হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মহিলাকে তার অভিভাবক বিয়ে দেয়নি, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। অভিভাবক ছাড়া মহিলা কর্তৃক বিয়ে সম্পন্ন না হওয়ার হাদীসটি হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর। অথচ খোদ আয়শা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে।

সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত হাদীস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা রাঃ নিজেই বিবাহ শুদ্ধ হয় না একথা বুঝাননি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বিয়ে অসম্পূর্ণ হয় অভিভাবক ছাড়া। কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ।

সুতরাং উপরে প্রশ্নের বর্ননা মতে তারা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রস্তাব গ্রহণ সম্পন্ন করে থাকেন, তাহলে তাদের বিয়ে ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক শুদ্ধ হয়ে গেছে। যদিও তাদের পরিবার কিছুই জানে না। কিংবা যদি তারা অনুমতি নাও দিয়ে থাকে।

সুত্রসমূহ

صحيح مسلم: 1421 عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.

المصنف لابن أبي شيبة: 15953 عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ

سنن ابن ماجه: 1874 عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “

سنن أبي داود: 2096 حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ”

سنن أبي داود: 1879 عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا، فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ»، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا، فَإِنْ تَشَاجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لَا وَلِيَّ لَهُ»

المصنف لابن أبي شيبة: 15955 أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ.

إعلاء السنن: 11/65-70

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

স্ত্রী যদি সেচ্ছায় মহর মাফ করে দেয়, তাহলে কি তা জায়েজ হবে?

ফতওয়া কোডঃ 154-বি-25-08-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম, হযরত আমার প্রশ্ন হলো, স্ত্রী যদি সেচ্ছায় মহর মাফ করে দেয়, তাহলে কি তা জায়েজ হবে?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

স্ত্রী যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দিয়ে দেয়, তাহলে স্বামী তা সানন্দে ভোগ করতে পারবে। পূর্ণ মহর ছেড়ে দেওয়া বা পূর্ণ মহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। তবে স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয়, তাহলে তা মাফ হবে না।

সুত্রসমূহ

احكام القران للجصاص: 2/57-58

تفسير ابن كثير: 1/442

بيان القران: 2/93

تفسير عثماني: رقم 100

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

স্বামী-স্ত্রী যে ঘরে থাকে, সেখানে অন্য কেউ প্রবেশ করবে না?

ফতওয়া কোডঃ 127-বি-24-05-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রশ্ন হলোঃ স্বামী ও স্ত্রী যে ঘরে থাকে, সে ঘরে কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ প্রবেশ করবেন না। এই ধরনের কোন বিধান শরীয়তে আছে কি?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

হ্যা, এটা কোন কোন স্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতে হতে পারে। কেননা শরিয়তে একজন স্ত্রীর জন্য অনুমতি আছে যে, সে স্বামীর কাছে আলাদা কোন ঘর চাইতে পারবে, যাতে পুরুষের কোন আত্বীয় উক্ত ঘরে প্রবেশ না করতে পারে৷ অর্থাৎ মহিলাকে আলাদা কোন ঘর দেয়া হতে পারে, যাতে কেহ তার অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করতে না পারে৷

সুত্রসমূহ

الدر المختار مع رد المحتار: 3/601

الشرح الوقاية: 2/177 وله منع والديها وولدها من غيره من الدخول عليها

بهشتی زیور: 4/311 جس طرح عورت کو اختیار ہے کہ اپنے لئے کوئی الگ گھر مانگے جس میں مرد کا کوئی رشتہ دار نہ رہنے پاوے فقط عورت ہی کے قبض میں رہے

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

জান্নাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিসেবে কারা থাকবেন? বিবি আছিয়া, বিবি মরিয়ম ও হযরত মূসা আ. এর বোন থাকবেন কি?

ফতওয়া কোডঃ 90-বি,হাসু-21-02-1443

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম, আশাকরি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন, আমার ২টি প্রশ্ন ছিল।

১.জান্নাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিসেবে কে থাকবেন?

২.আমি একটি হাদিস শুনেছি যে, জান্নাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিসেবে বিবি আছিয়া, বিবি মরিয়ম ও হযরত মূসা আ. এর বোনও থাকবেন।এই হাদিস কি সহিহ? উত্তর জানালে উপকৃত হব, জাযাকাল্লাহ।

উত্তরঃ بسم الله الرحمن الرحيم

১. জান্নাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিসেবে দুনিয়াতে যারা ছিলেন তারাই থাকবেন।

২. জান্নাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিসেবে বিবি আছিয়া, বিবি মরিয়ম ও হযরত মূসা আ. এর বোন থাকবেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, তবে এই হাদিসের রেওয়ায়াত দুর্বল।

সুত্রঃ তিরিমিযী শরিফঃ হাদিস নং ২৫৬৩, ইবনে মাজাহ শরিফঃ হাদিস নং ৪৩৩৮, মুসনাদে আহমাদঃ হাদিস নং ১১০৭৮, তাফসিরে কুরতুবীঃ ১৩/১৭০, রুহুল মাআনীঃ ২৮/৪৮১, আল মুজামুল কাবীরঃ ৮/২৫৮-২৫৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ১৮/৬২৭

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

স্বামী নিখোজ হলে করনীয়

ফতওয়া কোডঃ 14-তাখু,নামা,বি-14-08-1442

প্রশ্নঃ

১. আমার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন কে ২০১৬ ইং নভেম্বর মাসে আব্দুল আউয়ালের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং থেকে আমার মেয়ের জামাই নিখোজ হয়। আমার বিয়াইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে বিয়াই বলে যে, তাদের সাথে ছেলের কোন যোগাযোগ নেই, তারা আশংক্ষা করছে তাদের ছেলেকে পাওনাদাররা মেরে ফেলছে ,তাই তারা আমার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে বলছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের কি হুকুম, তা জানালে উপকৃত হব।

২. মোসাঃ সুরাইয়া ইয়াসমিন পিতাঃ মোঃ রুহুল আমীন আমার স্বামী আব্দুল আউয়াল (শাওন) গত ১৭ই জুলাই ২০১৮ ইং নিখোজ হয়। আমার শশুর শাশুড়ী আমার পিতাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, আপনার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিন। একাকী ছবর করা আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার উপর শরিয়তের মাসআলা কি? ফায়ছালা জানালে উপকৃত হব।

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

স্বামী নিখোজ হওয়ার পর স্ত্রী কতদিন অপেক্ষা করবে এই ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে ৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তবে এই মাসআলায় হানাফী মাযহাবের উলামায়ে মুতাআখরীন ইমাম মালেক রহঃ এর মাযহাবের উপর ফতোয়া দিয়েছেন। এর বিস্তারিত বিবরণ হলোঃ স্বামী নিখোজ হওয়ার পর সংবাদটি মুসলিম কাযীর নিকট গিয়ে স্ত্রী পেশ করবে। এবং তার সাধ্যনুযায়ী নিখোজ স্বামীকে তালাশ করার পর যদি না পায়,তাহলে কাযী স্ত্রীকে চার বছর অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিবে। যদি এর মধ্যে ফিরে এসে যায় তাহলে ভালো। আর যদি ফিরে না আসে তাহলে কাযী তার স্বামীর মৃত্যুর হুকুম দিবে। কেননা, হযরত ওমর ফারুক রাঃ বলেন, নিখোঁজ স্বামী জন্য স্ত্রী চার বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। হযরত ওমর, ওছমান, আলী এবং অনেক তাবেয়ী থেকেও অনুরূপ ফতওয়া রয়েছে । অতপর স্ত্রী ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে। স্ত্রী দ্বিতীয় জায়গায় বিবাহ করার পর যদি হঠাৎ প্রথম স্বামী ফিরে আসে, তাহলে উক্ত মহিলা দ্বিতীয় স্বামীর নিকট থাকা জায়েয হবেনা। কেননা প্রথম স্বামী ফিরে আসার কারণে দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। অতপর ২য় বিবাহ বাতিল হবার কারণে ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পালন করার পর উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর স্ত্রী হবে। উল্লেখ্য যে,ইদ্দতের নিয়ম হচ্ছে- স্ত্রী গর্ভবতী না হলে মৃত বা নিখোজ স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশদিন ইদ্দত/ শোক পালন করবে। আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত পালনের অর্থ হল, স্বামী-স্ত্রী যে ঘরে বসবাস করত, উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ঐ ঘরেই তাকে অবস্থান করতে হবে। চিকিৎসা বা জীবিকার প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়। সুতরাং ইদ্দত অবস্থায় কোথাও বেড়াতে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া বা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া নাজায়েয ও হারাম। তাছাড়া ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম সাজ-সজ্জা গ্রহণ করাও নিষেধ। কাজেই ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত অলংকার পরা, হাতে মেহেদী লাগানো, আতর বা খুশবু লাগানো, সাজগোজের কাপড় পরা, চিকন দাঁতের চিরুনী দ্বারা চুল আঁচড়ানো বা এ ধরনের যত সাজ-সজ্জা মহিলারা করে থাকে তা সবই নিষেধ। এ অবস্থায় একদম সাদাসিধা থাকা জরুরী। এমনকি পান খাওয়ায় অভ্যস্ত থাকলে তা খেয়ে ঠোট লাল করা যাবে না।

সূত্রসমূহ

سورة البقرة: 234

اللباب في شرح الكتاب: 5-6

سنن البيهقي: رقم 15345-15348

المهلة: 9/316-324

مصنف عبد الرزاق: رفم 12325

احسن الفتاوى: 5/467

فتاوى محمودية: 16/342

رد المحتار: 4/295-296

شرح المنهاج على مختصر الخليل: 2/375

شرح الصغير: 2/694

حاشية الدسوقي: 2/479

منار السبيل: 2/88

الدر المختار: 3/510-511-531

الهداية: 2/423, 3/427

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

মেয়ে ছেলেকে উকিল বানালে, ঐ ছেলে কি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে?

ফতওয়া কোডঃ 03-বি-05-08-1442

প্রশ্নঃ

১. জনৈক মেয়ের সাথে আমার চেনা-জানা ছিল। দুজন দুজনকেই বেশ ভালবাসতাম। এক পর্যায়ে দুজনের পরিবারকেই এই ব্যপারে অবগত করা হয়। এবং দুই পরিবারই দুজনের বিয়েতে সম্মতি দেন তবে আরো দেরী করার কথা বলেন। এদিকে আমাদের ফোনে কথা বলার দরুণ কবীরা গোনাহ হচ্ছে, আমরা ডিসিশন নিলাম আমরা বিয়ে করে ফেলবো। এর কিছুদিন পর মেয়ে আমাকে ফোনে তাকে বিয়ে করার জন্যে আমাকে তার বিয়ের উকিল বানিয়ে দেয়। (বলে রাখা ভাল, আমরা দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক) অতঃপর আমি দুজন স্বাক্ষীর সামনে বলি- আমি অমুক মেয়েকে দুই হাজার আটশো এক টাকা ধার্য করে বিয়ে করে নিলাম। আবার শুরুতে এটাও বলেছি- সে আমাকে তাকে বিয়ে করার জন্যে জন্যে তার উকিল বানিয়েছে। এরপর আমি বলেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। এখন প্রশ্ন হলো:- আমাদের বিয়েটা কি সম্মপন্ন হয়েছে? এখন কি আমরা কথা-বার্তা বললে পাপ হবে? বা তার সাথে স্বামী-স্ত্রী সূলভ আচরণ করা যাবে কিনা? আশা করি দলীল দিয়ে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
২. বর্তমান সময়ে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কত?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

১. যখন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে আপনাকে উকিল বানিয়েছে, এবং আপনি দুইজন স্বাক্ষির সামনে তার পক্ষ থেকে উকিল হয়ে বিবাহ করেছেন, সুতরাং আপনার বিবাহ করাটা সহিহ হয়েছে।
২. আর মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে দশ দিরহাম, ১ দেরহাম = ২.৯৭৫ গ্রাম, এই হিসেবে বর্তমানে সোনা-রুপার দাম হিসেবে মুল্য বের করলে যত টাকা হবে, সেটাই সর্বনিম্ন মহর।

সুত্রসমূহ

الدر المختار: 4/224 ويتولى طرفى النكاح واحد بإيجاب يقوم مقام القبول

الفتاوى الهندية: 1-295

خلاصة الفتاوى: 2/30

الفتاوى التاتارخانية: 4/49

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading