এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

সমিতির সকল অর্থ সঠিকভাবে সুদ মুক্ত বিনিয়োগ করার পদ্ধতি কি?

ফতওয়া কোডঃ 208-ব্যাবা-18-04-1445

প্রশ্নঃ

বরাবর, প্রধান মুফতি সাহেব রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ।

আমার জানার বিষয় হল, আমি সিরাজগঞ্জ নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির একজন সদস্য, আমাদের এখানে প্রায় ৩০০ সদস্য মিলে একটি সমিতি করা হয়েছে, এখানে তারা প্রতি সপ্তাহে কিছু টাকা জমা করেন, সমস্ত টাকা এক জায়গায় একত্র করা হয় এবং এখান থেকে বিভিন্নজনকে ঋণ এবং অন্যান্যভাবে সহযোগিতা করা হয় ও বিনিয়োগ করা হয় এবং তাদের থেকে লাভ নেয়া হয়।

অভিজ্ঞ মুফতি সাহেবদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, বর্তমানে যে সিস্টেমে লাভ নেয়া হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ সুদ। তাই আমার জানার বিষয় হল এ সমিতির সকল অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে বা কিভাবে ব্যবহার করলে সুদ মুক্ত লাভ করা যায় যা সকলের জন্য গ্রহণ করা হালাল হবে। যদি একাধিক কোন নিয়ম নীতি বা কোন সিস্টেম থাকে তাহলে বিস্তারিত আকারে জানালে সমিতির সকলেই কৃতজ্ঞ থাকতাম।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

বিনিময় বিহীন ঋণ একটি উত্তম ইবাদত। ঋণের বিনিময়ে লভ্যাংশ বা অন্য কিছু গ্রহণ করা সুদ যা সম্পূর্ণ হারাম। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ ফান্ড ও সমিতির বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা হালাল হওয়ার জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য বিনিয়োগ ফান্ড বা ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র বিনিয়োগ বিভাগই না বরং যেসব শর্তের সাথে চুক্তি করা হবে সেগুলোও ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী হওয়া অপরিহার্য। এসব মৌলিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিনিয়োগের লভ্যাংশ সুদ মুক্ত রাখার জন্য এবং ঋণের বিকল্প হিসেবে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

১. ইকুইটি (Equity) ইকুইটি: সমিতির জমাকৃত অর্থ জয়েন্ট স্টক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা। অর্থাৎ শেয়ার ক্রয় করে সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধির পর বিক্রি করে দেওয়া বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পক্ষ হতে বণ্টনকৃত বিভক্ত মুনাফার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। এ পদ্ধতিতে মুনাফা বৈধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। শেয়ারে পুঁজি বিনিয়োগের শর্তাবলী (১) কোম্পানির মৌলিক ব্যবসা শরীয়তের পরিপন্থী না হওয়া। (২) কোম্পানির যাবতীয় কার্যক্রম সুদ ভিত্তিক না হওয়া। (৩) কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রদেয় মুনাফার আংশিক সুদ সম্পৃক্ত হলে সেই অনুপাতে মুনাফার অংশ সদকা করে দেওয়া।

২. ইজারা (Less) বিনিয়োগে সুদ মুক্ত লভ্যাংশ লাভের আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে ইজারা। ইজারা অর্থ: ভাড়ায় প্রদান করা। এ পদ্ধতিতে সমিতির সদস্যদের জমাকৃত অর্থ দ্বারা বাড়ি, যাত্রি/মালবাহী গাড়ি বা চাহিদা অনুপাতে অন্যান্য মাল-সামান ক্রয় করা। যাতে সেগুলোর ভোগ ব্যবহারকে ভাড়া হিসেবে প্রদান করা যায়। সমিতিই সে সব সম্পদের মালিক থাকবে, ব্যবহারকারী থেকে ভাড়া নেয়া হবে এবং এ ভাড়া সমিতির আয়-ইনকামের উপকরণ হবে। যা সদস্যদের মাঝে তাদের অংশানুপাতে বণ্টিত হবে। ইজারার যাবতীয় চুক্তি শরয়ী নীতিমালার অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক। ইজারার শর্তাবলী: (১) ভাড়ায় (লিজে) প্রদানকৃত সম্পদ ভোগ-ব্যবহারের উপযুক্ত হতে হবে এবং ভাড়া ঐ সময় থেকে উসূল করা হবে যখন থেকে এ ভোগ- ব্যবহারের অধিকার ইজারাদারকে (Leassee) প্রদান করা হবে। (২) ইজারায় প্রদানকৃত সম্পদ এমন ধরনের হতে হবে যা হালাল এবং বৈধভাবে ভোগ-ব্যবহার করা যায়। (৩) মালিকানার কারণে অর্পিত যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ইজারাদাতা (Lessor) গ্রহণ করবে। (৪) প্রকৃত চুক্তির প্রারম্ভেই ভাড়া নির্দিষ্ট এবং উভয়পক্ষের পরিজ্ঞাত হতে হবে।

৩. পণ্য ফান্ড বিনিয়োগে সুদ মুক্ত লভ্যাংশ লাভের আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে “পণ্য ফান্ড”। সমিতির ফান্ডে জমাকৃত অর্থ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। যাতে সেগুলোকে পরবর্তীতে বিক্রি করা যায়। এভাবে বিক্রি করার দ্বারা যে মুনাফা অর্জিত হবে তা ফান্ডের আয়-ইনকাম হিসেবে গণ্য হবে, যা সদস্যদের মাঝে অংশানুপাতে বণ্টন করা হবে। এ পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ক্রয়-বিক্রি সংক্রান্ত শরয়ী বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য। যেমন- (১) বিক্রিত পণ্য বিক্রির সময় বিক্রেতার মালিকানায় থাকতে হবে, তাই সর্ট সেল শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। (২) যে পণ্যে ব্যবসা হচ্ছে তা হালাল হতে হবে। মদ, শূকর এবং অন্যান্য হারাম মালের ব্যবসা বৈধ নয়। (৩) বিক্রেতা যে পণ্য বিক্রি করতে ইচ্ছুক তাতে তার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কজা থাকতে হবে। (৪) ঐ জিনিসের মূল্য নির্ধারিত এবং উভয়পক্ষের মাঝে জ্ঞাত থাকতে হবে । মূল্য অনির্দিষ্ট কিংবা কোন অনিশ্চিত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হলে বিক্রি ফাসিদ হয়ে যাবে।

৪. মুরাবাহা: মুরাবাহা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এক বিশেষ প্রকারের ক্রয়-বিক্রয়। কোন বিক্রেতা তার ক্রেতার সাথে এই চুক্তি করলো যে, সে তাকে একটি নির্দিষ্ট পণ্য নির্ধারিত মুনাফার ভিত্তিতে প্রদান করবে, সে মুনাফা ঐ পণ্যের ক্রয় মূল্যের উপর অতিরিক্ত ধার্য করা হবে। এই ক্রয়-বিক্রয়কে “মুরাবাহা” বলা হয়। মুরাবাহার মূল উপাদান এই যে, বিক্রেতার পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা ক্রেতাকে অবগত করে তার উপর কিছু মুনাফা সংযোজন করে নেয়া। এই মুনাফা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থের আকৃতিতেও হতে পারে এবং শতকরার ভিত্তিতেও হতে পারে । মুরাবাহার ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধ নগদেও হতে পারে আবার উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে পরবর্তী যেকোন তারিখেও হতে পারে। এ কারণে মুরাবাহা অপরিহার্যভাবে শুধুমাত্র বাকিতে পরিশোধ করাকেই বুঝায় না।

৫. মুদারাবা মুদারাবা” অংশীদারিত্বের একটি বিশেষ পদ্ধতি। যে অংশীদারিত্বে এক শরীক অপরকে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। সমিতির অর্থ মুদারাবার ভিত্তিতে অপরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী কারবারিকে তার পারিশ্রমিক প্রদানের পর অবশিষ্ট লভ্যাংশ সমিতি লাভ করবে। উল্লেখ্য যে, এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মৌলিকভাবে কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো। এ পদ্ধতিতে বিনিয়োগের আগে প্রত্যেকটা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নেওয়া আবশ্যক।

সুত্রসমূহ

سورة البقرة: 275 وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

سورة البقرة: 275 ٱلَّذِینَ یَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا یَقُومُونَ إِلَّا كَمَا یَقُومُ ٱلَّذِی یَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ ذَ ٰ⁠لِكَ بِأَنَّهُمۡ قَالُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡبَیۡعُ مِثۡلُ ٱلرِّبَوٰا۟ۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَیۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟ۚ …لله

مسند أحمد: رقم: 3809 عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

مسند أحمد: رقم: 3809 عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

مسند أبي يعلى: رقم: 4981 عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

معارف السنن: رقم: 1/34 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء

رد المحتار: 554/9 كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع

بذل المجهود: 1/37 كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء

اسلامي بنكاري كي بنيادي: مفتي تقي عثماني

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top