এবছর (১৪৪৫ হিজরী) এর সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০/=, সর্বোচ্চ ৩,৫৬০/= টাকা।

গায়বী জানাযা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই!

ফতওয়া কোডঃ 212-বিপ্র-18-06-1445

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। হযরত গায়বী জানাযা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। কোন সাহাবায়ে কেরামের কি গায়বী জানাযা হয়েছিলো কিনা?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

অনুপস্থিত ব্যক্তির জানাজা বা গায়েবানা জানাযা বলতে কোন শব্দ কুরআন, হাদীসের কোথাও নেই। এর কোন প্রমাণ না কুরআনে আছে, না হাদীসে আছে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীগণ, তাবে তাবেয়ীগণ থেকে এ শব্দের কোন জানাযার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ নেই। এটি বিদআত।

ৎৎরসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশেদীন কোন দিন কারো গায়েবানা জানাযা আদায় করেননি আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ বলেন, মুসলমানদের মাঝে অনেক এমন ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন যারা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দূরে তথা গায়েব ছিলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম কারোরই গায়েবানা জানাযা পড়েননি। এমনিভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর আমলে কত কারী সাহাবীকে মুসাইলামায়ে কাজ্জাব শহীদ করেছে। আরো কত সাহাবী জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছেন কিন্তু হযরত আবু বকর রা. এবং অন্যান্য সাহাবীগণ কেউই গায়েবানা জানাযা আদায় করেননি। হযরত উমর রাঃ এর আমলে কত জিহাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কত হাজার হাজার সাহাবা জিহাদের ময়দানে মদীনা থেকে বহু দূরে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোন একজনেরও গায়েবানা জানাযা হযরত উমর রা. আমলে অনুষ্ঠিত হয়েছে মর্মে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। পারবে না হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী রা. এর আমলের কোন উদাহরণ পেশ করতে। অথচ হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী রা. আমলেও কত হাজার হাজার সাহাবা ও তাবেয়ীগণ শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোন সাহাবীই গায়েবানা জানাযার ইলান করেছেন বা নিজে গায়েবানা জানাযার নামায পড়েছেন মর্মে কোন প্রমাণ না হাদীস থেকে পেশ করতে পারবে, না ইতিহাস থেকে পেশ করতে পারবে।

গায়েবানা জানাযা জায়েয প্রবক্তাদের দলীল ও তার খন্ডন

দলীলঃ বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা রা. সূত্রে একটি বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ দিলেন। অতঃপর জানাযার জন্য অগ্রসর হলেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁর পিছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম চারটি তাকবীর বললেন।” একই বর্ণনা সহীহ ইবনে হিব্বানে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে । আর নাজাশী যেহেতু মদীনায় উপস্থিত ছিল না, অথচ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নাজাশীর জানাযা নামায পড়িয়েছেন, তাই বুঝা গেল যে, গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই গায়েবানা জানাযা পড়ার প্রমাণ রয়েছে।

খন্ডন ১ঃ প্রথমে আমরা দেখে নেই উক্ত হাদীসটি কোন রাবী বর্ণনা করেছেন? উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীগণ নাজাশীর জানাযা সংশ্লিষ্ট হাদীস থেকে গায়েবানা জানাযা জায়েজ হবার দলীল হিসেবেই বুঝেছেন না ভিন্ন কিছু? উক্ত হাদীসের প্রসিদ্ধতম রাবী রয়েছেন তিনজন।

১- হযরত আবূ হুরায়রা রা.।

২- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা.।

৩- হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা.।

বাদশা নাজাশী ইন্তেকাল করেছেন নবম হিজরীর রজব মাসে। আর হযরত আবূ হুরায়রা রা. ইন্তেকাল করেছেন ৫৯ হিজরীতে। অর্থাৎ উক্ত ঘটনার পর হযরত আবূ হুরায়রা রা. প্রায় ৫০ বছর জীবিত ছিলেন। হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. ইন্তেকাল করেছেন ৭৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। সেই হিসেবে তিনি উক্ত ঘটনার পর ৭০ বছর জীবিত ছিলেন। আর হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. উক্ত ঘটনার পর জীবিত ছিলেন প্রায় ৪৩ বছর। কিন্তু হযরত আবূ হুরায়রা রা. এ ৫০ বছরের মাঝে, হযরত জাবের রা. পুরো ৭০ বছরের মাঝে এবং হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. তার জীবনের এই ৪৩ বছরের মাঝে কোনদিন কারো গায়েবানা জানাযা পড়েছেন, কিংবা গায়েবানা জানাযা পড়তে বলেছেন কেউ প্রমাণ দেখাতে পারবে? এত দীর্ঘ বেঁচে থাকার পরও উক্ত ঘটনা থেকে এসকল সাহাবাগণ যদি গায়েবানা জানাযা জায়েজের প্রমাণই বুঝে থাকতেন, তাহলে তাদের জমানায় ইন্তেকাল হওয়া অসংখ্য সাহাবীদের গায়েবানা জানাযা তাদের পড়ার কথা। কিন্তু একজনের গায়েবানা জানাযা পড়ানোর কোন প্রমাণ না কোন হাদীস গ্রন্থে আছে না কোন ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়। যা পরিস্কার প্রমাণ করছে যে, উক্ত ঘটনা দ্বারা কোন সাহাবী গায়েবানা জানাযা জায়েজ বুঝেননি। বরং বিষয় ছিল ভিন্ন। আসলে কি হয়েছিল তখন? আমরা যদি উক্ত ঘটনার বর্ণনা সম্বলিত সকল হাদীসকে সামনে রাখি, তাহলে আমাদের কাছে উক্ত বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

খন্ডন ২ঃ নাজাশীর ঘটনা সম্বলিত হাদীসমূহ

১. হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. বলেন وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِ তথা আমরা জানাযার ব্যাপারে এটাই অনুধাবন করছিলাম যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে।

২. হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ বলেন وَهُمْ لَا يَظُنُّونَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يديه তথা “সাহাবায়ে কেরামের বিশ্বাস এটাই ছিল যে, জানাযা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে উপস্থিত।

৩. এছাড়া উক্ত বর্ণনাটি হযরত আবান রহ. সূত্রে হযরত ইমরান ইবনে হাছীন থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “যখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে জানাযা পড়েছি, তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।”

৪. আবু আওয়ানাতে এ শব্দ এসেছে যে, نحن لا نرى ان الجنازة قدمنا তথা আমরা দেখছিলাম যে, আমাদের সামনে জানাযা রাখা।

উপরোক্ত সকল বর্ণনার দিকে তাকালে পরিস্কার হয়ে যাবে, নাজাশীর জানাযা বর্ণনাকারী সাহাবীগণ কেন উক্ত ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জায়েজের দলীল মনে করেননি। নাজাশীর জানাযার বর্ণনা করলেও জীবনে কোনদিন নিজে গায়েবানা জানাযা পড়েননি। কারণ তারা পরিস্কার বুঝেছিলেন নাজাশীর জানাযার নামাযটি গায়েবানা জানাযা নয়। বরং উপস্থিত ব্যক্তির জানাযা।

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর মুজেযা স্বরূপ নাজাশীকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে উপস্থিত করে দেয়া হয়েছিল। আর সেই জানাযা সামনে নিয়ে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা পড়িয়েছেন। আর সামনে নিয়ে জানাযা পড়ার নাম উপস্থিত ব্যক্তির জানাযা গায়েবানা জানাযা নয়। সাহাবাগণ এ ভেদ জানার কারণে কোন সাহাবী জীবনে কোনদিন গায়েবানা জানাজা পড়েননি। কিংবা গায়েবানা জানাযা পড়ার দাবিও করেননি, কিংবা গায়েবানা জানাযার পক্ষে উক্ত হাদীসের দলীলও পেশ করেননি।

সুত্রসমূহ

زاد المعاد: 1/519

صحيح البخاري: 1/167

حاشیہ موطا مالک: 208

مسند احمد: 2005 وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِ

صحيح ابن حبان: 3102 وَهُمْ لَا يَظُنُّونَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يديه

عمدة القارئ: 7/33

فتح الباري: 3/243

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

Scroll to Top