নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে উলামায়ে দেওবন্দ সত্যিকারের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত এর অন্তর্ভুক্ত। দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রতিষ্ঠা থেকে আজ পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দ ও তার অনুসারীরা আলহামদুলিল্লাহ হকের উপর রয়েছেন ও কুরআন-সুন্নাহর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
হযরত কাসেম নানুতুবী রহ. হযরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. ও কুতুবে আলম হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. যারা আকাবিরে দেওবন্দ ছিলেন, তারা ছাড়া আরও যারা ছিলেন ও এখনও আছেন সকলে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের সুন্নতের সাচ্চা-পাক্কা অনুসারী।
উলামায়ে দেওবন্দ এখনও বিদআত দমন ও এহইয়ায়ে সুন্নতের কাজে নিজের জীবন বিসর্জন করে আসছেন। তাই হাদিসের ভাষায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের যেই গুনাবলী রয়েছে তা সবই উলামায়ে দেওবন্দের মধ্যে বিদ্যমান। তাই উলামায়ে দেওবন্দকে সত্যিকারের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত বলা একজন সত্যিকারের মুসলমানের তাকওয়া ও কৃতজ্ঞতাবধের দাবী রাখে।
২. বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান বলেছেন, “রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন”, “দাজ্জাল ইসরাইল থেকে বের হবে”, “আইএমএফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার পলিসির মাস্টার মাইন্ড হলো দাজ্জাল”। তার এই বক্তব্য কি সঠিক?
৩. বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এর বক্তব্য শোনা যাবে কি?
সমাধানঃ
بسم اللہ الرحمن الرحیم
১. নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান দ্বীনি প্রাতিষ্ঠানিক সনদপ্রাপ্ত কোন আলেম নন।
২. রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো আত্মহত্যা করতেই যাননি, বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এর এই বক্তব্য সম্পূর্ন সুন্নাহ বিরোধী, এটা তার অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়।
“দাজ্জাল ইসরাইল থেকে বের হবে” বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এর এই বক্তব্যও সম্পূর্ন সুন্নাহ বিরোধী। অথচ সুনানে তিরমিযিতে এসেছে দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে খোরাসান থেকে বের হবে। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দাজ্জাল পূর্ব দিকের একটি ভূমি থেকে বের হবে। যাকে বলা হয় খোরাসান।
“আইএমএফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করার পলিসির মাস্টার মাইন্ড হলো দাজ্জাল” বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এর এই বক্তব্যও সম্পূর্ন সুন্নাহ বিরোধী। অথচ সহিহ মুসলিমে হযরত তামীমে দারী রা. এর হাদিসে দাজ্জালকে “মানুষ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা দেখতে পেরেছি যে, তিনি নিজের অনুমান, উপলব্ধি ও ব্যক্তিগত যুক্তিকে শরীয়তের মূল ভাষার অনুগামী ও অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এবং নিজের ব্যক্তিগত খণ্ডিত অনেক ব্যাখ্যাকে কুরআন ও হাদিসের সবচেয়ে সুনিশ্চিত ব্যাখ্যা হিসেবে উপস্থাপন করেন। বিষয়টা তার জন্য খুবই ভয়াবহ ও উম্মতকে পথভ্রুষ্টতার মধ্যে অবতরন করার শামিল। যা সম্পুর্ন পরিহারযোগ্য।
৩. বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান একজন সাধারন মানুষ, তিনি কোন আলেম নন, কোন নির্ভরযোগ্য আলেমের সাথেও তার আত্বশুদ্ধি মূলক সম্পর্ক নেই। তাই তার কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যামুলক বক্তব্য শোনার অনুমতি দেয়া যায় না, কোননা কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যামুলক বক্তব্য দেয়া একজন অভিজ্ঞ আলিম ও মুফতির কাজ। অবশ্য তার বক্তব্য অনুযায়ী প্রতিয়মান হয় যে, তিনি একজন গইরে মুকাল্লিদ, যদিও তিনি নিজেকে একজন শুধুমাত্র ‘‘মুসলমান’’ দাবি করেন।
তাই সাধারন মুসলমানদের জন্য কোন গাইরে আলেম ইসলামিক স্কলারের অনুসরন না করে হক্কানী উলামায়ে কিরামের অনুসরন করা ও তাদের বক্তব্য শ্রবন করা উচিৎ।
سنن الترميزي: رقم 2163 عن أبي بكر الصديق رضي الله عنه قال : حدّثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : الدَّجَّالُ يَخْرُجُ مِنْ أَرْضٍ بِالْمَشْرِقِ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ
فتح الباري: 12/359 ثم إن القائل ” فيما بَلَغَنا ” هو الزهري ، ومعنى الكلام : أن في جملة ما وصل إلينا من خبر رسول الله صلى الله عليه وسلم في هذه القصة . وهو من بلاغات الزهري وليس موصولاً ، وقال الكرماني : هذا هو الظاهر
شرح الحديث المقتفى فى مبعث النبى المصطفى: 177 هذا من كلام الزهري أو غيره ، غير عائشة ، والله أعلم ؛ لقوله : ”فيما بلغنا” ، ولم تقل عائشة في شيء من هذا الحديث ذلك
سورة البقرة: 217 وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ
ডাঃ জাকের নায়েক একজন ইসলামিক স্কলার, লক্ষ লক্ষ মানুষ তার কথা শোনেন, শুনেছি তার হাতে অনেক মানুষ মুসলমানও হয়েছে, আবার অনেক বিতর্কিত কথাও তার ব্যাপারে শোনা যায়, আমি জনতে চাই ডাঃ জাকের নায়েকের বক্তব্য শোনা যাবে কি না?
সমাধানঃ
بسم اللہ الرحمن الرحیم
অবশ্যই ডাঃ জাকের নায়েক একজন ইসলামিক স্কলার, লক্ষ লক্ষ মানুষ তার কথা শোনেন ও তার অনুসরন করেন। নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে তার বর্তমান কার্যকালাপ আগের চেয়ে খুব উন্নত নয়।
তার নতুন কিছু কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি আগের চেয়ে যেকোন কারনে তার ইসলাম বিরোধি বিভিন্ন কথা-বার্তা থেকে একটু নমনীয় হয়েছেন। কেউ কেউ বলে থাকেন তিনি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মাজহাবের অনুসারী, কিন্ত নির্ভযোগ্য তথ্যমতে তিনিও গইরে মুকাল্লিদ ও তথাকথিত আহলে হাদিস মতাদর্শী।
আগেও তার ব্যাপারে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, তিনি তার কথা-বার্তা ও কাজ-কর্মে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকিদা বহির্ভুত কার্য্যক্রম পরিচালনা করেছেন, কুরআনে কারিম ও তার তাফসিরের মধ্যে রদবদল করেছেন, মনমতো কুরআনে কারিমের তাফসির করেছেন, ইসলামী আইন বিষয়ক মাসআলাগুলোর মধ্যে পূর্ববর্তি সালফে-সালেহীন ও উম্মতের আইম্মায়ে মুজতাহিদীনগনের মতামত উপেক্ষা করে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ফতওয়া দিয়েছেন।
উম্মতের সাধারন মুসলমানদের মধ্যে হক্কানী উলামা ও মাদরাসা বিদ্বেষী পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছেন, যা অতিত ও বর্তমান যুগের গইরে মুকাল্লিদ ও তথাকথিত আহলে হাদিসদের কাজ বলে প্রমানিত হয়, আর সর্বসম্মতিক্ররমে গইরে মুকাল্লিদ ও তথাকথিত আহলে হাদিসরা আহলে সান্নত ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ।
তার ব্যাপারে নতুন করে জানতে চাওয়া হলে তার দেশের সর্বোচ্চ ফতওয়া কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ এখনও তার বক্তব্য শোনা ও তার অনুসরন নাজায়েয বলে ফতওয়া প্রদান করছে।
অতএব নিজ জীবন-যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নতের অনুসরন, পাশাপাশি এমন অভিজ্ঞ আলেমের অনুসরন জরুরী যার প্রকাশ্য সুন্নতে নববী দিয়ে পরিপূর্ন। তাই সুন্নতের অনুসারী হক্কানী উলামায়ে কিরামগন থেকে দ্বীনি সার্বিক বিষয় জেনে নেবেনে, তাদের বক্তব্য ইখলাসের সাথে শুনবেন ও আমল করবেন।
হক্কানী উলামায়ে কিরাম থাকতে ডাঃ জাকের নায়েকের বক্তব্য শোনা ও তার অনুসরন করা জয়েয হবে না।
সুত্রসমূহ
چند اہم عصری مسائل: 1/93-113 ڈاکٹر ذاکر نائک اپنے تقریروں اور تحریروں کے آئینے میں
আমি ব্যবসার জন্য ফেসবুক ব্যাবহার করি, কিন্তু আমার ফেসবুক প্রোফাইলে কোন ছবি নাই, যার কারণে আমাকে কেউ চিনতে পারে না, আমার প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবসার জন্য ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করতে পারব কিনা?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
শরিয়তের দৃষ্টিতে ছবি উঠা না জায়েয ও হারাম। কেবলমাত্র একান্ত অপারগতার ক্ষেত্রে ছবি উঠার অবকাশ আছে। ফেসবুকে ব্যাবসা যেহেতু একান্তই অপারগতা নয়, তাই ফেসবুকে ব্যাবসার উদ্দেশ্যে ছবি উঠা ও তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কারণ ব্যাবসার লক্ষ্য-কোটি সহিহ পথ ও পদ্ধতি রয়েছে। আপনি এই না জায়েয পন্থা পরিহার করে বিকল্প অন্য কোনো পন্থা বা ব্যাবসা গ্রহণ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত ফেসবুকে ছবি না দিয়ে আপনার ব্যাবসার মুনাসিব কোনো লোগো/মনোগ্রাম তৈরি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বা আহবাবদেরকে ম্যাসেজ কিংবা ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অবগত করে সেই লোগো/মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। এত সহজ বিকল্প পথ থাকতে ছবি উঠা ও ব্যবহার করা জায়েয হবে না।
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! হুযুর একটি মাসআলার জন্য আমি পেরেশান। প্রশ্নটি হল ফেইসবুক ইত্যাদির প্রোফাইল পিকচারে ফটো দেওয়ার হুকুম কি? তাড়াতাড়ি জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনার সব ভালো করুন। আমিন।
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
ফেসবুকের প্রোফাইলে নিজের ছবি দেয়া সম্বন্ধে দারুল উলুম দেওবন্দের অনলাইন ফতওয়া বিভাগে প্রকাশিত একটি ফতওয়া নিচে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে, নিম্নক্ত ফতওয়ার সাথে রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ফাতওয়া বিভাগের মুফতি সাহেবগন একাত্বতা পোষন করছেন।
“প্রশ্নঃ ১. ফেসবুকের প্রোফাইলে নিজের ছবি দেয়া জায়েজ আছে কিনা? ২. ফেসবুক ব্যবহার করা কি গুনাহ? ৩. কারো ছবির প্রশংসা করা কেমন? ৪. ফেসবুকের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার-প্রসার করা কেমন? ৫. ফেসবুকের দ্বীনি এবং জায়েজ ব্যবহার কিভাবে করা যেতে পারে? উত্তরঃ ১. ফেসবুকের প্রোফাইলে নিজের ছবি ব্যবহার করা নাজায়েজ। ২. ফেসবুকের যায়েজ ব্যবহার, যায়েজ! ৩. পিকচারে যদি কোন প্রাণীর ছবি থাকে, তাহলে তার প্রশংসা করা যাবে না। ৪. ফেসবুকের মাধ্যমে প্রমাণযুক্ত, সঠিক কথাগুলো প্রচার করা যায়েজ। ৫. ফেসবুকের দ্বীনি এবং জায়েজ ব্যবহার, যারা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের থেকে জেনে নিতে হবে, আমাদের তথ্য মতে ফেসবুক ব্যবহার করার দ্বারা অধিকাংশ সময়ই শরীয়ত বিরোধী, অনুপকারী কাজকর্মে পতিত হতে হয়, কোন কোন সময় অনিচ্ছাসত্বেও খারাপ এবং নিকৃষ্ট ফটোসমুহ, এবং অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম সমূহ সামনে এসে যায়, এজন্য সাধারণত সতর্কতাঃ হলো প্রয়োজন ছাড়া ফেসবুক ব্যবহার না করা, তবে প্রয়োাজনের সময় যায়েজ ব্যবহারে সমস্যা নেই।”