জুমুআ ও ইদাঈন

জুমুআর খুতবায় সম্মিলিত দুআ করা জায়েজ আছে কি?

ফতওয়া কোডঃ 178-জুই-28-04-1444

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম, জুমুআর খুতবায় দুআর সময় খতিব সাহেবসহ মুসল্লিরা সম্মিলিত ভাবে হাত তুলে দুআ করা জায়েজ আছে কি? আর যদি জায়েজ না হয় তাহলে এটা কি বিদআত হবে?

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

খুতবায় হাত তুলে দুআ করার অনুমতি নেই, ইমাম-মুসল্লী দুই জনের জন্যই, বরং এ সময় কেবল তৰ্জনীর ইশারায় দুআ করার অনুমতি আছে, খতীবকে হাত তুলে দুআ করতে দেখে বহু সলফ বদ দুআ করতেন।

বিশর বিন মারওয়ানকে খুতবায় হাত তুলে দুআ করতে দেখে হযরত উমারাহ বিন রুআইবান রহ. বললেনঃ ঐ হাত দুটিকে আল্লাহ তাআলা বিকৃত করুন।

হযরত মাসরুক রহ. বলেনঃ জুমুআর দিন ইমাম-মুক্তাদি মিলে যারা হাত তুলে দুআ করে আল্লাহ তাআলা তাদের হাত কেটে নিন।

অনুরুপ ভাবে শরিয়তে অনুমতি নাই মুক্তাদীদের হাত তুলে দোআ করা, বরং ইমাম খুতবায় হাত না তুলে দুআ করলে মুক্তাদী হাত না তুলেই একাকী নিন্মস্বরে বা চুপে চুপে আমীন বলবে।

হা, খুতবায় বৃষ্টি প্ৰাৰ্থনা বা বৃষ্টি বন্ধ করার জন্য দুআ করার সময় ইমাম-মুক্তাদী সকলে হাত তুলে দুআ করবেন। এবং মুক্তাদীরা আমীন আমীন বলবেন।

সুত্রসমূহ

صحيح المسلم: رقم 874

سنن ابي داؤد: رقم 04

مصنف ابن ابي شيبة: رقم 5491-5493

صحيح البخاري: رقم 932-933, 1013-1029

سنن الترمذي: كتاب الجمعة

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

ঈদের নামাজের খতিবের জন্য যে টাকা মুসল্লিদের থেকে উত্তোলন করা হয় তা অন্য কোন ফান্ডে খরচ করা অবৈধ

ফতওয়া কোডঃ 156-জুই-21-09-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। হযরত, আশা করি আল্লাহর ফজলে ভালো ও সুস্থ থেকে দ্বীনী খিদমাহ আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন, আমার জানার বিষয় হলোঃ

ঈদের নামাজের খতিবের জন্য নামাজ পড়ানোর হাদিয়ার নামে যে টাকা মুসল্লিদের থেকে উত্তোলন করা হয় এবং মুসল্লিগণ ও স্বেচ্ছায় যে হাদীয়া ইমামের জন্য (টাকা উত্তোলন কারীদের হতে) দিয়ে থাকেন, সে টাকা কি সম্পূর্ণ ইমামামের হক? নাকি সেই টাকা হতে ইমাম কে কিছু দিয়ে বাকি টাকা সমাজের ফান্ডে জমা রাখা জায়েজ? এমনটি করলে কি গোনাহ হবে?

উক্ত মাসআলার শরঈ সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন বলে আশাবাদী, জাজাকুমুল্লাহ খায়রান।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

মূলত এই বিষয়টি যারা টাকা দান করছেন তাদের নিয়তের উপর নিৰ্ভরশীল। তবে উল্লেখিত প্ৰশ্নের বিবরণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যে, মুসুল্লী কতৃক ইমাম সাহেব কে যে টাকা হাদিয়া বা দান করছে তা মূলত ঈদের ইমামতি বাবদ শুধুমাত্ৰ ইমাম সাহেবকেই দেওয়া উদ্যেশ্য। অন্য কোন ফান্ডের জন্য নয়। সুতরাং ইমাম সাহেবকে হাদিয়া দেওয়ার জন্য যে টাকা উত্তোলনকারীদের হাতে বা নিজেরা স্বেচ্ছায় দিচ্ছে তা মূলত ইমাম সাহেবের হক। কিছু টাকা ইমাম সাহেবকে দিয়ে বাকি টাকা অন্য কোন ফান্ডে খরচ করা বৈধ নয়।

সুত্রসমূহ

ردالمحتار: 4/459 وفي الاسعاف .ولا يجوز له ان يفعل الا ما شرط وقت العقد .اه.وفي فتاوي الشيخ القاسم ومت كان من شرط معتبر في الوقف فليس للواقف تغييره ولا تخصيصه بعد تقرره ولا سيما بعد الحكم

مجمع الانهر: كتاب الوقف

فتح القدير: كتاب الوقف

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

লকডাউন (করনাকালীন) এর সময়ে পাঞ্জেগানা মসজিদের জুমার নামাজ এখন জামে মসজিদে পরতে হবে!

ফতওয়া কোডঃ 106-জুই,সা-22-04-1443

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। আমি মিরপুর শেওড়াপাড়ায়‌ একটি ১০ তলা ভবনে বসবাস করি। এই ভবনের ছাদে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে এবং একজন ইমাম নিয়োজিত আছেন। ভবণে মোট ৪০ টি পরিবার বসবাস করে। সরকারের বিধিনিষেধের কারণে করোনাকালীন সময়ে আমরা এখানে জুম্মার নামাজ আদায় শুরু করি এবং যামাতে ২০/২৫ জন মুসল্লির সমাগম হয়। নিরাপত্তার জন্য ভবণে বাইরের মুসল্লিদের প্রবেশের কোন সুযোগ নেই এবং মসজিদটি ওয়াকফো করা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, করোনাত্তোর এই মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা যাবে কি না বা আদায় করলে নামাজ শহী সুদ্ধ হবে কি না ? মসজিদে বাইরের মুসল্লিদের প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় এই মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা ঠিক হবে কি না ? এ ব্যাপারে শরীয়ত সম্মত বিধান কি, বা পূর্বশর্ত কি কি, জানালে আমরা সবাই উপকৃত হব।

সমাধানঃ

بسم اللہ الرحمن الرحیم

করোনাকালীন সময়ে উযর বা সমস্যার কারনে পাঞ্জেগানা মসজিদে প্রয়োজনে জুমার নামাজ বৈধ ছিলো, যেহেতু এখন আর উক্ত সমস্যা নেই, মুসল্লিরা আগের মতো জামে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করবে। দারুল উলুম উলুম দেওবন্দ থেকে এই ফতওয়া জারী করা হয়েছে।

সুত্রসমূহ

দারুল উলুম উলুম দেওবন্দ এর ফতওয়া নং 607486, Click To Fatwa : 485-318/H=04/1443

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

জুমুআর খুতবা চলাকালিন কালেকশন নিষিদ্ধ

ফতওয়া কোডঃ 22-জুই-13-10-1442

প্রশ্নঃ

আমাদের মসজিদে একটা নিয়ম আছে, সেটা হল জুমুআর নামাজে খুতবার পূর্বে ইমাম সাহেব মসজিদের কালেকশন এর জন্য ঘোষণা করলে প্রত্যেক কাতার থেকে একজন করে ব্যক্তি উঠে কালেকশন করেন, প্রশ্ন হল কালেকশন পুরোপুরি শেষ না হতেই মুয়াজ্জিন সাহেব খুতবার আযান দেন, এবং এরপর খুতবা শুরু হয়, এদিকে যারা কালেকশন করছেন তারা মুআজ্জিন সাহেবের খুতবার আজান চলাকালীনও কালেকশন করতে থাকেন, কখনো কখনো কালেকশন চলতে চলতে খুতবাও শুরু হয়ে যায়, আমার জানার বিষয় হল খুতবা চলাকালীন বা খুতবার আজান শুরু হওয়ার পর এরকম দান বক্স চালানো বা কালেকশন করার শরীয়ত বৈধতা দেয় কিনা? যদি কালেকশন করা অবৈধ হয়, তাহলে এমন অবৈধ কাজ পরিচালনা করা বা এর সাথে সম্পৃক্ত থাকা কতটুকু বৈধ?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

যেহেতু জুমুআর দ্বিতীয় আযান খুতবার অংশ, তাই আজান শুরু হওয়ার পর থেকে উভয় খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত কালেকশন করা, দান বক্স চালানো, এগুলো পরিচালনা করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও নিষিদ্ধ, আর এমন অবৈধ ও নিষিদ্ধ কাজের সাথে জড়িত থাকা বা এ কাজে সহযোগিতা করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।

সুত্রসমূহ

الدر المختار: 1/399, 6/360

رد المحتار: 2/185

فتاوى محمودية: 2/342

الهداية: 1/231-232

فتاوي دار العلوم: 5/121

فتاوى فقيه الملت: 4/386-867, 4/401

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading

সৌদির সাথে মিল রেখে রোজা-ঈদ উদযাপনের সুযোগ নেই

ফতওয়া কোডঃ 17-সই-27-08-1442

প্রশ্নঃ

সৌদির সাথে মিল রেখে রোজা-ঈদ উদযাপন করা যাবে?

সমাধানঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে, ইসলামে সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপনের সুযোগ নেই। সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনার সারাংশ হলো: ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, সিরিয়ায় চাঁদ দেখা মদীনাবাসীদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা সিরিয়ার একদিন পর চাঁদ দেখেছি অতএব আমরা আমাদের হিসাব মতে পূর্ণ ৩০ দিন রোজা রেখে যাবো অথবা চাঁদ দেখে রোজা সমাপ্ত করবো। পনেরশত বছর যাবত মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধভাবে এভাবেই রোজা এবং ঈদ উদযাপন করে আসছে। সৌদি আরবের বিন বায, ইবনে উসাইমীন ,সালেহ আল ফাওযান, ইবনে তাইমিয়া এবং হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ইমাম জামাল উদ্দিন যায়লায়ী, আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানী সহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের‌ বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এবং সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক ইফতা বোর্ড এভাবেই ফাতওয়া দিয়েছেন।

সূত্রসমূহ

صحيح المسلم: 1/384 رقم 1087

سنن النسائي: 1/300 رقم 2110

سنن ابي داود: 1/319 رقم 2332

سنن الترمذي: 3/418 رقم 693

فتاوى اسلامية لابن عثيمين: 2/113

فتاوى علماء البلد الحرام: 285

تبيين الحقائق: 1/321

والله اعلم بالصواب

দারুল ইফতা, রহমানিয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Loading