লাইলাতুল বারাআতে হালুয়া রুটি খাওয়া কি সুন্নত না ওয়াজিব?
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
শবে বরাতে হালুয়া রুটি পাকানো-খাওয়া ওয়াজিব-সুন্নত তো দূরের কথা, শরীয়তে এর কোন প্রমাণ না থাকায় এ ধরনের আয়োজন করা জায়েজ নেই এবং বড় ধরনের বিদআত, উম্মতে মুসলিমার জন্য এধরনের রুসম সম্পুর্ন পরিত্যাজ্য।
জানাযার নামাযের পর সবাই হাত তুলে দুআ করা কী জায়েয? কুরআন ও হাদিসের দলীলসহ জানতে চাই।
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তে মুহাম্মদিয়ায় যখন কোন মুসলমান মারা যায় তখন তার মাগফিরাতের জন্য বিশেষভাবে কিছু দুআ করা হয়। ঐ বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুআ করার নাম জানাযার নামাজ। এই জানাযার নামাজ ফরজে কেফায়া, যদি কিছু লোক আদায় করে তাহলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। অর্থাৎ মহল্লাবাসী সকল লোকের পক্ষ হইতেই ফরয আদায় হইয়া যায়, আর কেউ আদায় না করিলে প্রত্যেকেই গুণাহগার হইতে হইবে। এই জানাযার (দুআর) পর পূনরায় হাত উঠিয়ে দুআ করা সম্পূর্ণ বিদআত। নবী করীম সল্লল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রাঃ, এমন কি কোন ইমামগণ রহঃ থেকেও এর কোন প্রমান নাই। নবী করীম সল্লল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তিনটি যুগকে শ্রেষ্ট যুগ হিসাবে ভবিষ্যত বাণী দিয়ে গেছেন, তাদের থেকেও এর কোন প্রমান নাই। আর হাদীসে আছে রাসূল সাঃ বলেন, عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ অর্থ, হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য।
হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লল্লাহা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ অর্থ, তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। মিশকাতুল মাসাবিহর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থে আছে, ولا يدعو للميت بعد صلوة الجنازة لانه يشبه الزيادة فى صلوة الجنازة অর্থাতঃ জানাযার নামাজের পর মায়্যিতের জন্য কোন দুআ নাই। কেননা এটা একটা জানাযার নামাযে অতিতিক্ত কাজ করার মত। ফাতওয়ায়ে বাযযাযিয়্যার মধ্যে আছে, لا يقوم بالدعاء بعد صلوة الجنازة لانه دعاء مرة অের্থ, জানাযার পর দুআর জন্য অপেক্ষা করোনা, কেননা জানাযা হল একটা দুআ। কান্নুযদাকায়েক এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ বাহরুর রায়েক আছে, لا يدعو بعد التسليم অর্থ, সালামের পর আর কোন দুআ নাই। আল্লামা তক্বী উসমানী দাঃ বাঃ উনার লিখিত কিতাব ফাতওয়ায়ে উসমানিতে লিখেন জানাযার পরে দুআ করা বিদআত, একাজ তরক করা ওয়াজিব।
সুতরাং উল্লেখিত হাদীস এবং ফিকাহ-ফাতওয়ার কিতাবের আলোচনার আলোকে একথা প্রমানীত হয় যে, প্রশ্নে বর্ণিত সুরতে তথা জানাযার নামাযের পর হাত তুলে দুআ করা সম্পূর্নরূপে না জায়েয ও বিদআত। এসব কাজ থেকে বেচে থাকা চাই।
ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই!
সমাধানঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার) বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকার প্রকাশিত একটি ফতওয়া নিচে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে, নিম্নক্ত ফতওয়ার সাথে রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ফাতওয়া বিভাগের মুফতি সাহেবগন একাত্বতা পোষন করছেন।
“বরাবর, প্রধান মুফতি সাহেব দামাত বারাকাতুহুম, মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা৷ বিষয়ঃ অপসংস্কৃতি! প্রশ্নঃ ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শরীয়ত সম্মত কিনা? তথাকথিত শিল্পীগোষ্ঠী সমূহের মাধ্যমে ইসলামী সংগীত এর হুকুম কি? এবং সঙ্গীত শোনা জায়েয আছে কিনা? এবং ইহা ভিডিও আকারে প্রচার করা যাবে কিনা? নিবেদকঃ মাওলানা ইসমাইল সিরাজী দাঃ বাঃ, কে এম রোড, হোঃ নং ৭৪২, মাসুমপুর, সিরাজগঞ্জ। উত্তরঃ এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইসলামে বিনোদন নিষেধ নয়, তাই বলে কোনও অনৈসলামিক কাজকে ইসলামের লেবেল লাগিয়ে ইসলামী বিনোদন বলে চালিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই, বর্তমান ইসলামী সাংস্কৃতি ও সংগীত অনুষ্ঠান নাম দিয়ে যে অনুষ্ঠান করা হয়, কুরআন-সুন্নাহর বিজ্ঞ আলেমগণ তা নাজায়েয হওয়ার ফতওয়াই দিয়ে থাকেন এবং এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার অনুমতি দেন না, কেননা এসব অনুষ্ঠানে শরিয়ত পরিপন্থী অনেক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। যেমনঃ ১. প্রচলিত ইসলামী সংগীতগুলো সুর, কণ্ঠ, আওয়াজের তরঙ্গ, ইকো, সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং ও ধোয়া নির্গমন ইত্যাদি সব বিষয় আধুনিক গানের সাথে সামাঞ্জস্য রাখে, বিধায় তা গানের অন্তর্ভুক্ত। ২. আধুনিক গানের মতো এখানেও শ্রোতাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের বিকৃতি আসে, যেমন গানের সুরে সুরে শরীর ও মাথা দুলানো, পশুর মত অস্বাভাবিক বিকট আওয়াজ, যেমন “ঠিক” ইত্যাদি বলা। ৩. এটা খেল-তামাশা (لھو-لعب) এর অন্তর্ভুক্ত, হাসি, ঠাট্টা, তামাশা, মনমুগ্ধকর অঙ্গভঙ্গি করে শ্রোতাদের মন মাতানো ও তাদের আনন্দ উৎসব এবং মিলন মেলা হিসেবে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ৪. এর দ্বারা মানুষ ইলম, আমল, ইত্যাদি থেকে বিমুখ হয়, কেউ সংগীত বানানো, কন্ঠ সুন্দর করা, গাওয়া, ক্যাসেট বের করা ইত্যাদিতে মূল্যবান সময় ব্যয় করে। কেউ তা শুনে শুনে সময় নষ্ট করে। ৫. এটা জায়েজ কাজ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে নাজায়েয কাজ করার সুযোগ নেয়া হয়, ছবি তোলা ও ভিডিও করা হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। অর্থাৎ এটি অনেক নাজায়েয কাজ এর উৎস! এছাড়াও আরোও অনেক নাজায়েয, ক্ষতিকর ও অনর্থক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়। অতএব বর্তমান প্রচলিত ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শরীয়ত সম্মত নয়, তাই এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করে কোন শিল্পী গোষ্ঠীর মাধ্যমে সংগীত পরিবেশন করা ও শোনা এবং ভিডিও করে প্রচার করা জায়েয নেই।
বুযুর্গদের কবর যিয়ারতের জন্য যাওয়া জায়েয আছে, তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ১. কোনো ভাবেই মেলা, উরশ ইত্যাদি সময়ে সেখানে যাওয়া যাবেনা। ২. শরীয়তের খেলাফ কোনো কাজ করা যাবেনা। ৩. উৎসব করে, আনন্দ করে যাওয়া যাবেনা।